বাবা, সজল পাঁজা ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক। ২০১৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে, চার বছর সে দলেরই বিধায়ক থেকে সদ্য দল বদলেছেন তাঁর ছেলে সৈকত পাঁজা। বিজেপিতে যোগ দেওয়া সৈকত শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে এক ভিডিয়ো-বার্তায় (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) সন্দেহ প্রকাশ করলেন সজলবাবুর মৃত্যু নিয়ে। জানালেন, আজ, শনিবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলে কী ভাবে সে ব্যাপারে তদন্ত চাওয়া হবে, সে পরামর্শ নেবেন তিনি।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রশ্ন, “এ নিয়ে চার বছর ধরে কেউ কোনও কথা বলেননি! আমরা জানি, সজল হৃদরোগে মারা গিয়েছেন। তবে সৈকত তদন্ত চাইতেই পারে।’’ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘সৈকত পাঁজার দাবি ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমরাও তদন্ত চাইব।’’
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে মন্তেশ্বরে জিতে বিধায়ক হন সজলবাবু। সে বছরই দিঘায় অবৈধ খনি ও থ্যালাসেমিয়া সংক্রান্ত পিটিশন কমিটির সদস্য হিসেবে গিয়ে মারা যান তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান বলে জানা গিয়েছিল। এ দিন ভিডিয়ো-বার্তায় সৈকতকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এটা আমার সন্দেহ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাবা (সজল পাঁজা) মারা যান। আমি কিছু তথ্যও পেয়েছি। এখনও সব তথ্য হাতে পাইনি। সজল পাঁজার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, খুন করা হয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পরেই রাজ্য পুলিশের এক কর্তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তিনি বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তদন্ত চেয়েছিলাম। তখন তিনি বলেন, ‘তোমার মা, ভাই রয়েছে। তোমার কিছু হয়ে গেলে, কে দেখবে’? তখনই আমার মনে সন্দেহ হয়।’’ যদিও সেই পুলিশকর্তার পরিচয় ভাঙেননি তিনি।
তার পরে এত বছর বিধায়ক থাকলেও, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বা পুলিশের কাছে কেন অভিযোগ করলেন না? এ দিন মেমারি ২ ব্লকের উন্টিয়া গ্রামের মামারবাড়ি থেকে ফোনে সৈকতের দাবি, “আগে তৃণমূলেরই বহু নেতার মুখে বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না বলে শুনেছিলাম। বিজেপিতে যোগ দিতে মেদিনীপুরে গিয়ে, বাবার মৃত্যু সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে পারি। সন্দেহ ছিল। মেদিনীপুরে গিয়ে সেই সন্দেহটা আরও গাঢ় হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘রাতের বেলা ময়না-তদন্ত হয় না। অথচ, রাত দেড়টা নাগাদ বাবার ময়না-তদন্ত হয়েছিল। আরও কিছু তথ্য জোগাড় করে তদন্ত চাওয়া হবে।’’ সাত মিনিটের একটু বেশি সময়ের ভিডিয়োয় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁকে কাজ করতে না দেওয়া, তোলাবাজি, তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় কোণঠাসা করা এবং দল ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগও করেছেন সৈকত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যে, যা বলছে বলুক, এ সব কথার জবাব মানুষ জবাব দেবেন।’’