Advertisement
E-Paper

ছত্রধর-সঙ্গীদের নয়া মঞ্চই গলার কাঁটা নবান্নের

এমন সরল দাবি নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি জেলাকে কার্যত অচল করে রাখা জনজাতিদের নিয়ে স্বস্তিতে নেই রাজ্য। এই আন্দোলনের নেপথ্যের কারিগরদের সম্পর্কে খোঁজখবরও করেছেন গোয়েন্দারা।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২৬
ছত্রধর মাহাতো। ফাইল চিত্র

ছত্রধর মাহাতো। ফাইল চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশে থাকাকালীন জঙ্গলমহলে দিনভর রেল অবরোধ করেছিল জনজাতি সংগঠন। তাতে রেল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পরের দিন পর্যন্ত যাত্রীদের যে-দুঃসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল, অবরোধকারীদের দাবি ছিল সেই তুলনায় নিতান্ত নিরীহ, সরল। তাঁদের দাবি, সাঁওতালি ভাষার বিকাশ ও পঠনপাঠনের সুযোগ বাড়াতে হবে।

এমন সরল দাবি নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি জেলাকে কার্যত অচল করে রাখা জনজাতিদের নিয়ে স্বস্তিতে নেই রাজ্য। এই আন্দোলনের নেপথ্যের কারিগরদের সম্পর্কে খোঁজখবরও করেছেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র দফতরের খবর, জনজাতি আন্দোলনের নামে জঙ্গলমহলকে যাঁরা আবার অশান্ত করছেন, তাঁদের সকলেই এক সময় পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁদেরই একাংশ আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের নামে নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছেন। ফলে জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদী ভ্রুকুটি দেখছে স্বরাষ্ট্র দফতর।

গোয়েন্দাদের দাবি, আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ গত এপ্রিলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আত্মপ্রকাশ করে। তাদের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল, জঙ্গলমহলে তৃণমূলের নিচু তলার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করা। সেই লক্ষ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি, বাঁশপাহাড়ি, জামবনি, লালগড়ের পঞ্চায়েতে প্রার্থী দেয় মঞ্চ। বাঁকুড়ার রাইপুরেও সক্রিয় ছিলেন আদিবাসী মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। ১১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিয়ে মঞ্চের ৩০ জন সদস্য জিতেছেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৯ জনের মধ্যে পাঁচ জনকে জেতাতে পেরেছে মঞ্চ। বেলপাহাড়িতে জেলা পরিষদের দু’টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তারা। গোয়েন্দারা জেনেছেন, আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের সভাপতি বাবলু মুর্মু এবং সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন ধর্মাল মান্ডি। যদিও মঞ্চের নেতারা কে কোন পদে রয়েছেন, কেউই তা ঠিকমতো বলতে চান না।

রাজ্য গোয়েন্দা বাহিনীর দাবি, গত ৭ সেপ্টেম্বর শহুরে নকশালদের বিভিন্ন সংগঠনের ডাকা এক সমাবেশে কলকাতায় এসেছিলেন ধর্মাল। ফলে আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের সঙ্গে মাওবাদী যোগ আর অস্পষ্ট থাকছে না বলে জানাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা। যদিও সে-দিনের সমাবেশের সংগঠকেরা জানান, ধর্মাল মান্ডি নামে কেউ ওই বৈঠকে আসেননি।

গোয়েন্দারা অবশ্য মাওবাদীদের সঙ্গে সমন্বয় মঞ্চের যোগাযোগের বিষয়ে নিশ্চিত। তাঁদের একাংশের দাবি, কিষেনজির নেতৃত্বে জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা যখন হিংসাত্মক আন্দোলন করছিলেন, তখন সামনে আনা হয় পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটিকে। ছত্রধর মাহাতো ছিলেন সেই সংগঠনের নেতা। রাজ্য গোয়েন্দাদের দাবি, সেই সময়কার পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী কমিটির নেতাদের অনেকে আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চে যোগ দিয়েছেন। সুন্দর মাঝি, পূর্ণিমা মুর্মু, দাগোমণি টুডু, অমিত মোহন, নক্ষ্মীরাম মুর্মু, নগেন্দ্র সোরেন, সনু মুর্মু, জগন্নাথ সর্দার বা অমিত কুণ্ডুর মতো নেতারা এখন আদিবাসী মঞ্চের সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন। এঁরা সকলেই এক সময় ছত্রধরের নেতৃত্বে কাজ করেছেন বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

নবান্ন জেনেছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সমন্বয় মঞ্চ শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হলেও এখন তারা তৃণমূল ও বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়ার ডাক দিয়েছে। অগস্টে বেলপাহাড়ি মঞ্চের নেতারা এক বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গোয়েন্দাদের কাছে খবর আছে, সেই বৈঠকে মাওবাদী নেতা আকাশও ছিলেন। ঝাড়খণ্ড থেকে রাজ্যের আন্দোলনে নজর রাখছেন মাওবাদী শীর্ষ নেতা প্রশান্ত বসু ওরফে কিষাণদা ওরফে নির্ভয়। ঝাড়খণ্ড থেকে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়েছে বাঁশপাহাড়ি, বেলপাহাড়ি, শিলদা, জামবনিতে।

মাওবাদীদের সঙ্গে বিজেপির যোগসাজশও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজ্য গোয়েন্দারা। তাঁরা জেনেছেন, পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের
কমিটির প্রাক্তন সভাপতি কানাই হাঁসদা এখন বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। জেনেছেন, জঙ্গলমহলে বিজেপির আকস্মিক বাড়বাড়ন্তে আদিবাসীদের একাংশেরও সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। পুরো বিষয়টির দিকেই নজর রাখছে নবান্ন।

state Government Nabanna Maoist Stage Chhatradhar Mahato
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy