E-Paper

ভাইকে খুন? এমন ভোট চায় না গ্রাম

গোটা গ্রাম থমথমে। দুপুর রোদে পথচলতি অচেনা মানুষ দেখে বেড়ার ফাঁক দিয়ে কৌতূহলী চোখে দু’-এক জন মহিলার উঁকিঝুঁকি। ওই পর্যন্তই। কথা বলতে এগিয়ে এলেন না কেউ।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩৩
Election.

—প্রতীকী ছবি।

ভোটের লাইনে খুন হয়ে গিয়েছে আগের দিন সকালে। রবিবার দুপুরে নদিয়ার চাপড়ার কল্যাণদহ গ্রামে ঢুকে রাস্তায় দু’এক জন প্রৌঢ় ছাড়া কোনও পুরুষের দেখা মিলল না।

গোটা গ্রাম থমথমে। দুপুর রোদে পথচলতি অচেনা মানুষ দেখে বেড়ার ফাঁক দিয়ে কৌতূহলী চোখে দু’-এক জন মহিলার উঁকিঝুঁকি। ওই পর্যন্তই। কথা বলতে এগিয়ে এলেন না কেউ। বরং পাছে কথা বলতে হয়, সেই ভেবে ঘুরে তাকানো মাত্র সরে গেলেন।

শনিবার সকালে বুথের সমনে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় তৃণমূল কর্মী হামজার আলি হালসানাকে (৫৬)। আহত হন তাঁর মেয়ে-জামাই, ছেলে, শ্যালক, ভাই-সহ অনেকে। নিহতের ছেলে সাহিন আলি হালসানা ১৯ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছেন। তার মধ্যে নিহতের নিজের ভাই, ভাইপো, খুড়তুতো ভাইয়ের নাম আছে। কংগ্রেস প্রার্থী জাহিদ হোসেন হালসানা-সহ চার জন গ্রেফতার হয়েছেন। এই জাহিদ নিহতের খুড়তুতো ভাই ও তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য। নিহতের নিজের ভাই বরজাহান হালসানা ও আর এক ভাই আসকার হালসানার ছেলে সোহেল হালসানা পলাতক। শনিবার রাত থেকেই তাদের বাড়িতে তালা ঝুলছে।

হালসানারা ছয় ভাই। এক ভাই মাস কয়েক আগে মারা গিয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে সকলেই তৃণমূল করতেন। ভাইয়ে-ভাইয়ে মিল ছিল। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের সময় থেকে পরিস্থিতি বদলে যায়। টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হন তৃণমূলের তৎকালীন ব্লক সভাপতি জেবের শেখ। চাপড়া জুড়ে তৃণমূল আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ভাগ হয়ে যান হালসানা ভাইয়েরাও। হামজার আলিরা থেকে যান তৃণমূলে আর বরজাহান-আসকারেরা চলে যান নির্দলের দিকে। তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেও বিবাদ পাকিয়ে ওঠে।

বিধানসভায় হেরে নিজেকে কার্যত গুটিয়ে নিয়েছেন জেবের শেখ। কিন্তু তাঁর অনুগামী ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বিবাদ মেটেনি। স্থানীয় সূত্রের খবর, এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেবের-অনুগামীরা বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম ও কংগ্রেসের হয়ে ভোটে কাজ করেন। অনেকে কংগ্রেসের প্রার্থীও হন। কল্যাণদহে তৃণমূলের প্রাক্তন সদস্য জাহিদ আলি হালসানা কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁর পক্ষ নিয়েছেন বরজাহান-আসকরেরা। তৃণমূলের হয়েই ময়দানে নেমেছিলেন হামজার আলিরা।

নিহত হামজারের স্ত্রী রশিদা হালসানা বলেন, “আমরা মমতার লোক। আর ওরা নির্দলের। এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য এত বড় ক্ষতি করে দেবে, ভাবতেও পারিনি। দল করতে গিয়ে নিজের মায়ের পেটের ভাইকে কেউ খুন করে?” একই প্রশ্ন যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা গ্রাম জুড়ে। ধৃত কংগ্রেস প্রার্থী জাহিদ আলির বাড়ি হামজারের বাড়ির উল্টো দিকেই তাঁর বাড়ি। সেই বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে রশিদার ডুকরে ওঠা কান্নার শব্দ শোনা যায়।

বাড়ির দরজায় তালা। সামনেই কাঁধ ঝুঁকিয়ে বসে থাকা ধৃত জাহিদ আলির বৃদ্ধা মা ফরুজি বিবি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, “কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছি হামজারকে। দুই বাড়ির ছেলেরা এক সঙ্গে ধুলোমাটি মেখে বড় হয়েছে। এমন ভোট আমি চাই না!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 Nadia TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy