Advertisement
E-Paper

কালীপুজোর অপেক্ষায় থাকে সীমান্তের মুরুটিয়া

মুরুটিয়ার একেবারে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম শিকারপুর ফুনকাতলা। এখানকার কালীপুজোর দিকে বছরভর চেয়ে থাকেন সীমান্তের মানুষ। ফুনকাতলা শ্যামা মা পুজো কমিটির সভাপতি নরনারায়ণ ভট্টাচার্য জানান, ১৩৬৫ বঙ্গাব্দে এই পুজো শুরু হয়। এখন যেখানে কালীমন্দির, একসময় সেখানে ছিল ঘন জঙ্গল। তখন ফুনকাতলা থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত সারাদিনে দু’-একটি বাস যাতায়াত করত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩৩

মুরুটিয়ার একেবারে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম শিকারপুর ফুনকাতলা। এখানকার কালীপুজোর দিকে বছরভর চেয়ে থাকেন সীমান্তের মানুষ।

ফুনকাতলা শ্যামা মা পুজো কমিটির সভাপতি নরনারায়ণ ভট্টাচার্য জানান, ১৩৬৫ বঙ্গাব্দে এই পুজো শুরু হয়। এখন যেখানে কালীমন্দির, একসময় সেখানে ছিল ঘন জঙ্গল। তখন ফুনকাতলা থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত সারাদিনে দু’-একটি বাস যাতায়াত করত। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, পেশায় বাসচালক বেণীমাধব মিত্র কালীপুজোর রাতে ফুনকাতলায় বাসের মধ্যেই ঘুমিয়েছিলেন। বাড়িতে তাঁর কালীপুজো দেওয়ার কথা থাকলেও ছুটি না পাওয়ায় তিনি বাড়ি যেতে পারেননি। সেই রাতেই তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন যে, বাড়িতে নয়, ফুনকাতলাতেই তাঁকে কালীপুজো করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সে কথা জানান বাসের অন্যান্য সহকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। সকলের সাহায্যে সেই রাতেই কোনওরকমে কিছুটা জঙ্গল পরিষ্কার করে টিনের ছাউনি দিয়ে শুরু হয় কালীপুজো। বর্তমানে সেই পুজোই হয়ে উঠেছে সীমান্ত এলাকার সর্বজনীন পুজো।

নরনারায়ণবাবু বলেন, “এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এলাকার সব ধর্মের মানুষ। এক সময় বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ এই কালীপুজোর সময় এপারে চলে আসতেন। কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ির জন্য তাঁরা আর আসতে পারেন না।”

পুজো কমিটির সম্পাদক অমিয় মণ্ডল বলেন, “আমাদের এই পুজোয় কোনও চাঁদা নেওয়া হয় না। এলাকার মানুষ যে যেমন পারেন আমাদের সাহায্য করেন। কর্মসূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন তাঁরাও পুজোর সময় বাড়ি ফেরেন।” পুজোর প্রথম তিন বছর প্রতিমা তৈরি করেছিলেন কৃষ্ণনগরের শৈলেন পাল। তারপর থেকে টানা প্রায় ৪০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন নবদ্বীপের সুধীর সাহা। তাঁর অবর্তমানে কয়েক বছর সুধীরবাবুর ছেলে প্রদীপবাবু প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। গত ছয় বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করছেন স্থানীয় শিল্পী সুবোধ পাল। কালী মায়ের নিজস্ব সোনা ও রূপোর গয়না আছে। পুজোর সময় সেগুলি পরানো হয়। পুজো কমিটির সহ সভাপতি সুজয় স্বর্ণকার জানান, টানা দশ দিন পরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এই ক’দিনে প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার লোকের সমাগম হয়। মন্দিরের সামনে মঞ্চে এগারো দিন ধরে চলে বাউল, যাত্রাপালা-সহ নানারকম অনুষ্ঠান।

পুজো কমিটির সদস্য তথা শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান জগ্ননাথ বিশ্বাস জানান, এই পুজো উপলক্ষে ফি বছর মেলা বসে। এখানে পুজোর প্রসাদ তৈরি হয় চিনি ও নারকেল দিয়ে। প্রায় দশ হাজার হাঁড়িতে এই প্রসাদ দর্শনার্থীদের বিতরণ করা হয়। পুজোর রাতে প্রায় চার কুইন্টাল চাল-ডালের খিচুড়ি তৈরি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা নিশীথ প্রামাণিক বলেন, “ দুর্গাপুজোতে না এলেও কালীপুজোতে সকলের বাড়িতে আত্মীয়েরা আসেন।”

করিমপুরের বাথানপাড়ার জোংড়াদহ কালী মন্দিরের পুজো এ বার ৩৪ বছরে পা রাখল। ফুনকাতলার মতো এই পুজোতেও সব ধর্মের মানুষ যোগ দেন। পুজো কমিটির প্রধান ও পুজোর প্রতিষ্ঠাতা পরেশচন্দ্র পাল বলেন, “কৃষ্ণনগর করিমপুর রাজ্য সড়কের ঠিক এই জায়গায় একসময় দুর্ঘটনা ছিল রোজদিনের ব্যাপার। ১৩৮৮ বঙ্গাব্দে ষষ্ঠীর দিন আমার সামনেই বাস দুর্ঘটনায় আট জন যাত্রী মারা যান। সেই বছরেই কালীপুজো শুরু হয়। প্রথম দশ বছর টালির ছাউনি দেওয়া মন্দিরেই পুজো হত। তারপরে এই পাকা মন্দির তৈরি হয়। আস্তে আস্তে মন্দিরের টাকায় প্রায় এক বিঘা জমিও কেনা হয়েছে।” সীমান্তের এই পুজো দেখতেও ভিড় করেন দূরদুরান্তের বহু মানুষ।

karimpur kalipujo murutiya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy