Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙনে অস্তিত্ব হারানোর আশঙ্কায় সিরাজের সমাধিস্থল

ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে নবাব সিরাজদ্দৌলার সমাধিক্ষেত্র। লালবাগে ভাগীরথীর পশ্চিমপাড় লাগোয়া খোশবাগে ওই সমাধিক্ষেত্রে মোট ৩৪ জনের সমাধি রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে নবাব সিরাজদ্দৌলা, তাঁর দাদু নবাব আলিবর্দি খাঁ, সিরাজদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা ও মেয়ে উম্মত জহুরার সমাধি।

ভাঙনে তলিয়েছে ঘাট। এই ভাবেই যাতায়াত। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ভাঙনে তলিয়েছে ঘাট। এই ভাবেই যাতায়াত। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

শুভাশিস সৈয়দ
লালবাগ শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৯
Share: Save:

ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে নবাব সিরাজদ্দৌলার সমাধিক্ষেত্র।

লালবাগে ভাগীরথীর পশ্চিমপাড় লাগোয়া খোশবাগে ওই সমাধিক্ষেত্রে মোট ৩৪ জনের সমাধি রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে নবাব সিরাজদ্দৌলা, তাঁর দাদু নবাব আলিবর্দি খাঁ, সিরাজদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা ও মেয়ে উম্মত জহুরার সমাধি। অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে ভাগীরথীর ওই পাড় ভাঙছে। কিন্তু পাড় বাঁধাইয়ে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি। ফলে গত বছরও যে সমাধিক্ষেত্র ভাগীরথী থেকে প্রায় ৫০০ ফুট দূরত্বে ছিল, ভাঙনের ফলে সেই দূরত্ব এখন কমে ৩০০ ফুটে এসে ঠেকেছে। এর আগে হাজারদুয়ারির ঠিক উল্টো দিকে ডাহাপাড়ার কাছেআর এক প্রাসাদ হীরাঝিল ভাঙনের কবলে পড়ে ভাগীরথীর গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে সিরাজদ্দৌলার সমাধিক্ষেত্রও তার অস্তিত্ব হারাবে বলে আশঙ্কা ইতিহাস গবেষকদের।

১৭৬৫ সালের ১০ এপ্রিল ৮০ বছর বয়সে মারা যান আলিবর্দি খা।ঁ তাঁর মৃত্যুর পরে খোশবাগে ওই সমাধিক্ষেত্রে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। পলাশির যুদ্ধে পরাজিত নবাব সিরাজদ্দৌলার দেহও দাদু আলিবর্দি খাঁ-র সমাধির পাশেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল। মৃত্যুর পরে সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেসাকেও সেখানেই সমাধি দেওয়া হয়।

এই ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ পর্যটক ভাগীরথী পেরিয়ে খোশবাগে আসেন ওই সমাধিক্ষেত্র দেখতে। পর্যটন মরসুমে প্রায় ৬০টি নৌকা প্রতি দিন ভাগীরথীর পূর্বপাড় মতিঝিল ঘাট থেকে পশ্চিমপাড়ে খোশবাগের আমানিগঞ্জ ঘাটে যাতায়াত করে। কিন্তু ভাঙনের কবলে ওই ঘাট জলে তলিয়ে গিয়েছে। কোনও ভাবে পাড়ের মাটি কেটে অস্থায়ী ঘাট তৈরি করেছে হাজারদুয়ারি বোটম্যান সমিতি। ওই সংস্থার সম্পাদক ত্রিনাথ হালদার বলেন, “ভাঙনে ঘাট তলিয়ে গিয়েছে। ফলে পাড়ের মাটি কেটে কোনও ভাবে ঘাট তৈরি করা হয়েছে। অস্থায়ী ওই ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে দিয়ে পর্যটকদের ওঠানামা করাতে গিয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। প্রশাসন কিন্তু উদাসীন।”

ভাগীরথীর ওই ভাঙনে উদ্বেগ জানিয়ে মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি সম্প্রতি পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে সেচ দফতরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। ওই সংস্থার সম্পাদক স্বপনকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “খোশবাগ দেখতে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের কয়েক লক্ষ পর্যটকের ভিড় হয়। তাঁরা নৌকায় করে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে যান। কিন্তু ভাঙনের কবলে পড়ে এখন এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, নৌকাগুলি দাঁড় করানোর মতো কোনও বাঁধানো জায়গা বা জেটি নেই। এ দিকে পুজোর পরেই লালবাগে শুরু হয়ে যাবে পর্যটন মরসুম। তার আগে ওই অবস্থার উন্নতি না হলে পর্যটকরা কেউ খোশবাগমুখী হবেন না। মার খাবে পর্যটন ব্যবসা।”

খোশবাগে ভাগীরথীর ওই ভাঙন ঠেকাতে ১৫ দিন আগে সেচ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে মুর্শিদাবাদের বিধায়ক কংগ্রেসের শাওনী সিংহ রায় এলাকা সরেজমিন খতিয়ে দেখেন। খোশবাগ ছাড়াও তিনি নৌকা করে ভাগীরথীর পাড় বরাবর ভাঙনগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। শাওনী সিংহ রায় বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে ভাগীরথীর পশ্চিমপাড় ভাঙছে। প্রতি দিন ২-৪ ফুট করে পাড়ের মাটির চাঙড় ভেঙে পড়ছে। অবিলম্বে ওই পাড় বাঁধাইয়ের কাজ শুরু না হলে সিরাজদ্দৌলার স্মৃতিবিজড়িত হীরাঝিলের মতোই সিরাজের সমাধিক্ষেত্রও ভাঙনে তলিয়ে যাবে। অস্থায়ী ঘাট নির্মাণের জন্য সেচ দফতরের আধিকারিকদের বলা হয়েছে।” সেচ দফতরের বহরমপুর ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপন সাহা বলেন, “ভাঙন ঠেকাতে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। অর্থ অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE