Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩

মমতার বৈঠকে ঢুকতে নাজেহাল কর্মীরা, ক্ষোভ

তিন জেলার কর্মীদের নিয়ে বৈঠক। লোক হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৩০ হাজার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় দ্বিগুণ। ফলে বৈঠকের ভিতরে হোক বা বাইরের মাঠে, অব্যবস্থার নমুনা মিলেছে সর্বত্র। বসার চেয়ার কিংবা খাবার জায়গার ‘দখল’ নিয়ে কিঞ্চিৎ মান-অভিমানও হয়েছে অনেকের। এরমধ্যেই মাইকে ঘোষণা করতে হয়‘এ ভাবে চেয়ার তুলবেন না। এটা ঠিক নয়।

কল্যাণীতে মুখ্যমন্ত্রী।

কল্যাণীতে মুখ্যমন্ত্রী।

সৌমিত্র সিকদার
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

তিন জেলার কর্মীদের নিয়ে বৈঠক। লোক হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৩০ হাজার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় দ্বিগুণ। ফলে বৈঠকের ভিতরে হোক বা বাইরের মাঠে, অব্যবস্থার নমুনা মিলেছে সর্বত্র। বসার চেয়ার কিংবা খাবার জায়গার ‘দখল’ নিয়ে কিঞ্চিৎ মান-অভিমানও হয়েছে অনেকের। এরমধ্যেই মাইকে ঘোষণা করতে হয়‘এ ভাবে চেয়ার তুলবেন না। এটা ঠিক নয়। এই বৈঠক সুষ্ঠু ভাবে শেষ করার দায়িত্ব আপনাদের সকলের।’ বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজনের পরেও মাঠ কিংবা আশপাশের এলাকা পরিষ্কারের ফুরসত মেলেনি কারও। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল এঁটো থালা, ভাত, জলের বোতল।

Advertisement

শুক্রবার কল্যাণীর সেন্ট্রাল পার্কে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দূরদুরান্ত থেকে আসা কর্মীরা ভিড় জমিয়েছিলেন সেই সকাল থেকে। সেই ভিড়ে যুব তৃণমূলের নেতা কর্মীদের পাশাপাশি ছিলেন দিগনগরের সাগর সিকদার, বেলডাঙার বছর পনেরোর আসমত আলিরাও। আসমত ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। বুকে লাগানো ছিল প্রতিনিধি লেখা ব্যাজ। তবু ভিতরে ঢোকার সুযোগ হয়নি। অগত্যা বাইরে দাঁড়িয়েই নেত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। আসমত বলছে, “ভিতরে ঢুকব বলে ব্যাজটাও খুব কষ্ট করে জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু যা ভিড়, ঢুকতেই পারছি না।” বাইরে দাঁড়িয়ে গজগজ করছিলেন দিগনগরের সাগরবাবু, “ভিতরে জায়গা কোথায় যে বসব! আমরা প্রায় ৮০ জন এসেছিলাম। দু’-একজন বাদে সকলেরই এক অবস্থা।”

সাগরবাবুরা একা নন, ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরনো বহু কর্মীরাই বসার জায়গাটুকুও পাননি। সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১১ টায়। মুখ্যমন্ত্রীর ঢোকার কথা ছিল বেলা ১২ টা নাগাদ। কিন্তু তিনি এলেন যখন তখন প্রায় দুপুর ২ টো। মমতা ঢুকতেই আর দেরি করেনি আসমত। লম্বা একটা লাফ দিয়ে বাঁশের ব্যারিকেড টপকে সোজা চিত্র সাংবাদিকদের মাঝখানে। এদিক ওদিক তাকিয়ে হাসছেন আসমত, “এটুকু ঝুঁকি না নিলে মমতাকে তো দেখতেই পেতাম না!” তবে আসমতের মতো ওরকম লাফ-ঝাঁপ করতে পারেননি যাঁরা তাঁরা সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেন মূল মঞ্চের পাশে, অথবা রাস্তার দু’ধারে। তাতেই কি শান্তি আছে? মাঝেমধ্যেই নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে। কেউ আবার পরিচিত নেতাদের দেখতে পেয়ে ‘ম্যানেজ’ করে ভিতরে যাওয়ার আবদার জুড়েছেন। বলাই বাহুল্য, তা রক্ষা করতে পারেননি অধিকাংশ নেতা। তিন জেলার ৭৩ টি বিধানসভা এলাকার প্রতিনিধিরা এসেছিলেন এ দিনের সভায়। শেষ পর্যন্ত তাঁরা কেউ আধপেটা খেয়ে বাড়ি ফিরলেন। কেউ ফিরলেন খানিক হতাশ হয়েই। বেলা ৩ টে নাগাদ সভা শেষ হয়। দেখা যায় ব্যস্ত কর্মীরা অনেকেই তারপর ছুটে গিয়েছেন খাবারের জন্য। চারটি খাবার স্টলের তিনটি ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একটি মাত্র খোলা। সেখানে দায়িত্বে ছিলেন কল্যাণী পুরসভার উপ-পুরপ্রধান কল্যাণ দাস। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “সকাল ৯ টা থেকে খাবার দেওয়া শুরু হয়েছিল। যা লোক হওয়ার কথা ছিল তার দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। কী করে সামালাই বলুন তো?”

হেভিওয়েট নেতাদের গা-ছাড়া ভাব যেন এ দিনের মূল আকর্ষণ ছিল। সভা চলাকালীন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়কে পাওয়া গেল মঞ্চ থেকে কিছুটা দূরে। অনুগামী এবং অনুরাগীদের নিয়ে তিনি তখন ছবি তুলতে ব্যস্ত। জিজ্ঞাসা করতেই এক কর্মীর চটজলদি উত্তর, “কী করবে বলুন, ওরাই তো দাদার সঙ্গে ছবি তুলতে চাইছে। তাই দাদাও ওদের বারণ করতে পারেননি।” কোনও নেতা আবার তেমন গুরুত্ব পাচ্ছেন না ভেবে গিয়ে বসেছিলেন প্রেস কর্নারে। দেখতে পেয়ে আর এক নেতা দৌড়ে গিয়ে কানে কানে কিছু একটা বলতেই তড়িঘড়ি প্রেস কর্নার ছাড়লেন সেই নেতা।

Advertisement

ওই ভিড়ের মধ্যেই এক অষ্টাদশীর জিজ্ঞাসা ছিল, “তাপস পাল আসেননি?” প্রশ্নটা ঠিক সুবিধের নয় ভেবে এক নেতার গম্ভীর উত্তর ছিল, “উনি চিকিৎসার জন্য এখন মুূম্বইতে। এখানে থাকলে নিশ্চয়ই আসতেন।”

সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.