Advertisement
E-Paper

বর্ষপূর্তি নিয়ে জমাট তর্ক বহরমপুরে

বহরমপুর শহরের জন্মদিন কবে? গত শুক্রবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত ‘শহর বহরমপুরের ২৫০ বছর’ পূর্তি অনুষ্ঠানে সেই প্রশ্নে চলল জমাট বিতর্ক। বহরমপুরের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিতদের মধ্যে চলল কাঁটাছেড়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৫

বহরমপুর শহরের জন্মদিন কবে?

গত শুক্রবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত ‘শহর বহরমপুরের ২৫০ বছর’ পূর্তি অনুষ্ঠানে সেই প্রশ্নে চলল জমাট বিতর্ক। বহরমপুরের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিতদের মধ্যে চলল কাঁটাছেড়া। ‘লালন সেবা সমিতি’ ও ‘ব্রেস ফাউন্ডেশন’-এর যৌথ উদ্যোগে ওই অনুষ্ঠানের রেশ না কাটতেই ফের রবিবার রবীন্দ্রসদনের মঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘ঐতিহাসিক বহরমপুর ২৫০ বছর: ঐতিহ্য রক্ষার শপথ লগ্ন’ অনুষ্ঠানেও উঠে সেই জন্ম বছরের যথার্থতার প্রশ্ন। এ দিনের উদ্যোক্তা ‘মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’।

শুক্রবারের আলোচনার শুরুতেই ইতিহাস গবেষক বিষাণ গুপ্ত বললেন, ‘‘কোনও শহর নির্দিষ্ট দিনক্ষণে প্রতিষ্ঠিত হয় না। ক্রমবিকাশের মধ্যে আবর্তিত হয় একটি শহর।’’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন বহরমপুর শহর প্রতিষ্ঠার শতাধিক বছর আগেই এই শহরের উত্তরাংশের বন্দর-শহর কাশিমবাজার, কালিকাপুর, সৈয়দাবাদ এলাকার আন্তর্জাতিক খ্যাতির ইতিহাস। ১৯৫৩ সালে ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার তাঁর ‘ওল্ড মুর্শিদাবাদ’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘১৬৬৩ সালে কাশিমবাজারে ডাচ বণিকদের রেশম কারখানায় ৭০০ তাঁতি কাজ করতেন। কাশিমবাজারে তখন বাৎসরিক ২২০০০ বেল রেশম সুতো উৎপাদন হত।’ ওই সময় কাশিমবাজার, কালিকাপুর, সৈয়দাবাদ এলাকা ছিল ব্রিটিশ, ওলন্দাজ, ফরাসি ও আর্মেনিয়াম বণিকদের বাণিজ্য কুঠি। বিষাণ গুপ্তের মত, ‘‘কাশিমবাজারের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যিক যোগ ছিল। সেই কাশিমবাজার আজ বহরমপুর শহরের একটি অংশ বিশেষ মাত্র।’’

উদ্যোক্তারা তবে কীসের ভিত্তিতে বহরমপুর শহরের ২৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে ব্যস্ত? জানা গেল ওই মানদণ্ডের নাম ‘বহরমপুর সেনা’। পলাশির যুদ্ধ হয় ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। তার ৪ মাস পরে অক্টোবর মাসে কাশিমাবাজারের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তারা বহরমপুরে সেনানিবাস ও দুর্গ নির্মাণের জন্য লন্ডনের কর্তাদের অনুমোদন চান। দুর্গ নির্মাণের জন্য নবাব মিরজাফরের কাছ ৪০০ বিঘা জমি পেলেও লন্ডন থেকে অনুমোদন মেলেনি। কয়েক বছর পর ১৭৬৩ সালে মিরকাশিমের সঙ্গে বিবাদ বাধলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লন্ডনের কর্তারা বহরমপুরে সেনানিবাস গড়তে অনুমোদন দেয়। ইতিহাসবিদ বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখা ‘শহর বহরমপুর’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘‘সেনানিবাসকে কেন্দ্র করেই বহরমপুর শহর গড়ে উঠে। প্রথমে মিরজাফর প্রদত্ত ব্রহ্মপুর মৌজায় সেনানিবাসটি গড়ে উঠলেও ক্রমশ আয়তন বাড়তে থাকে। কালক্রমে গড় বহরমপুরের আয়তন হয় ৪২৬৭ বিঘা (২ বর্গ মাইলের কিছু বেশি)।’’

শহরের সেই সব দিনের কথা তুলে ধরেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মৃণাল চক্রবর্তী। বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শনেরও ধাত্রীভূমি এই শহর। কৃষ্ণনাথ কলেজ ও বহরমপুরের আদালত ঘিরে গড়ে ওঠে নবভারতের নির্মাতাদের নিয়ে বিদ্বজন গোষ্ঠী। ভূদেব মুখোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার সরকার, রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, গঙ্গাচরণ সরকার, বৈকুণ্ঠনাথ নাগ, বৈকুণ্ঠনাথ সেন, দীননাথ গঙ্গোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্রদের মতো গুণীজনদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেই ‘নবরত্ন সভা’।

ইতিহাস গবেষক খাজিম আহমেদ শোনালেন শহরের ভূমিপুত্রদের অতুলনীয় কৃতিত্বের কাহিনি। তিনি জানান, কাশিমবাজারের রাজা ২২ বছরের যুবক কৃষ্ণনাথ ১৮৪৪ সালে আধুনিক শিক্ষার প্রসারের জন্য বহরমপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে সম্পত্তি দান করার জন্য উইল করেছিলেন। সংস্কৃতি-চিকিৎসার প্রসারে কৃষ্ণনাথের বিধবা পত্মী নিঃসন্তান রানী স্বর্ণময়ী, ভাগ্নে মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর দান ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। মহেঞ্জোদড়োর আবিষ্কর্তা রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের ভূমিপুত্র।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন শহরের মিস্টার পল ছিলেন বহরমপুরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মেজর। এখানেই তাঁর বিয়ে হয় হান্টার সাহেবের মেয়ের সঙ্গে। নিউজিল্যান্ডে ফিরে মেজর পল স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য একটি ছোট্ট শহরের নাম রাখেন বহরমপুর।’’ সাংসদের মত, নিজের শহরের অতীত না জানলে জানা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আয়োজক সংস্থা ‘ব্রেস ফাউন্ডেশন’-এর কর্ণধার অতসীদেবী ও বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। বহরমপুরের নীলিমাপ্রভা মুক ও বধির বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুখাভিনয় পরিবশেন করে।

রবিবারের অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন সিধু কানহু বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রাজর্ষি চক্রবর্তী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিষাণ গুপ্ত, ইতিহাসবিদ বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনার শেষে শহর বহরমপুর নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠান থেকেই শশধর তর্কচূড়ামণির জীবন ও কর্ম নামে আশিসকুমার মণ্ডলের লেখা বই প্রকাশিত হয়।

Baharampur birth anniversary murshidabad Adhir Ranjan Chowdhury congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy