Advertisement
E-Paper

পুজোয় বাড়ি ফিরলেন ফুলমনি

হাসপাতালের মহিলা বিভাগ থেকে বাবার হাত ধরে যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন অন্য আবাসিকেরা জড়িয়ে ধরে চোখের জলে বলেছিলেন, ‘‘ভাল থাকিস।’’ প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘তোমরাও ভাল থেকো। আর মন খারাপ করো না। একদিন দেখবে, বাড়ির লোকজন এসে তোমাদেরকেও নিয়ে যাবে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪২
পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফুলমনি (লাল চুড়িদার)। —নিজস্ব চিত্র

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফুলমনি (লাল চুড়িদার)। —নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের মহিলা বিভাগ থেকে বাবার হাত ধরে যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন অন্য আবাসিকেরা জড়িয়ে ধরে চোখের জলে বলেছিলেন, ‘‘ভাল থাকিস।’’

প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘তোমরাও ভাল থেকো। আর মন খারাপ করো না। একদিন দেখবে, বাড়ির লোকজন এসে তোমাদেরকেও নিয়ে যাবে।’’

প্রায় বছর দেড়েক আগে নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে এসে পড়েছিলেন বর্ধমানের ভাতারের বাসিন্দা সুমিত্রা মাড্ডি। সেই থেকে ঠাঁই হয় হাসপাতালে। চিকিৎসকদের চেষ্টায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারপর ‘অঞ্জলি’ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত সোমবার সকালে পরিবারের লোকজনদের হাত ধরে বাড়ির পথ ধরেন।

যদিও শুরুতে ফুলমনিকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে চাননি পরিবারের লোকজন। কিন্তু ‘অঞ্জলি’র চেষ্টায় বাবা মঙলা মাড্ডি-সহ চার জন সদস্য এ দিন সকালে বর্ধমানের ভাতার থেকে বহরমপুরে এসে পৌঁছন। ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশেষে সুমিত্রাকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে সুমিত্রাদেবী বলেন, ‘‘পুজোয় পরিবারের লোকজনের সঙ্গে থাকব ভেবেই ভাল লাগছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমিত্রাদেবীকে উদ্ধার করার পরে বর্ধমান সিজেএম আদালতের নির্দেশে গত ২০১৫ সালের ৯ জুলাই বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যায় বর্ধমান জেলার পুলিশ। তার পর থেকেই তিনি মানসিক হাসপাতালে রয়েছেন। ভর্তি করানোর সময়ে তিনি নিজের নাম ও ঠিকানা বলতে পারেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন তাঁর নাম রাখে—‘ফুলমনি’।

অঞ্জলির পক্ষে সুমনা ভট্টাচার্য জানান, হাসপাতালের আবাসিক হিসেবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে অঞ্জলির কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন ওই তরুণী। কাউন্সেলিং করে জানা যায় যে তাঁর বাড়ি ভাতারে। সেখানকার এক জন পরিচিতের কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে পারেন। সেই মতো পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

পরিবার লোকজন জানান, সুমিত্রার বিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে বেশি দিন থাকতে পারেনি। শ্বশুরবাড়িতে চার মাস কাটানোর পরে পালিয়ে আসে। তাঁর পরে তাকে গলসির কাছে চড়কডাঙা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হয়। কিন্তু সেখান থেকেও তিনি পালিয়ে যান। নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। মাস খানেক আগে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, তাঁদের মেয়ে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে রয়েছেন।

চিকিৎসক মনোজ সেন জানান, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ওই তরুণী ‘ব্রিফ সাইকোটিক ডিসঅর্ডার’ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ফলে সাময়িক ভাবে তাঁর আচরণ ও কথাবার্তার মধ্যে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে মাস খানেকের মধ্যে তিনি সুস্থ হন।

তবে সুমিত্রার মতো ভাগ্য এত ভাল নয় অনেকের। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুপার প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘পুরুষ ও মহিলা আবাসিক মিলিয়ে ওই সংখ্যা ১১০ জন, যাঁরা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও হাসপাতালে রয়ে গিয়েছেন। ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন না।’’

patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy