এক সময়ের শিল্পনগরী কল্যাণী। প্রতিদিনের ব্যস্ততা লেগে থাকত বিভিন্ন কলকারখানায়। ছিল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা। শ্রমিক সংগ্রাম, আন্দোলন ইত্যাদি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশিরভাগ কারখানা। বহু ভবন এখন পরিত্যক্ত অবস্থায়। সেই ফাঁকা সেই সব ভবনই পরিণত হয়েছে অসামাজিক কাজের আঁতুড়ঘরে। বিশেষ করে সন্ধ্যে নামলেই জুয়ার রমরমা বাড়ছে। পুলিশের ধরপাকড়, অভিযান চললেও রাশ টানা যাচ্ছে না এণন অসামাজিক কাজে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আট মাসে কল্যাণী থানার বিভিন্ন জায়গা থেকে জুয়া খেলার অপরাধে ধরা পড়েছে ৬৩ জন। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। সঙ্গে বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাস, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন সামগ্রীও। জানা গিয়েছে, গয়েশপুর, গোকুলপুর, মাঝেরচর থেকে শুরু করে সগুনা, ঘোষপাড়া কিংবা কল্যাণী মেইন স্টেশন—প্রায় সব জায়গাতেই জুয়ার চক্র ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের নজর এড়াতে কোথাও রেললাইনের ধারে, পরিত্যক্ত বন্ধ কারখানার নির্জন এলাকা বা চায়ের দোকানে বসছে জুয়ার আসর। সম্প্রতি সগুনার গ্রিন বেল্ট কলোনিতে একটি জুয়ার আসর থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বন্ধ কারখানার ফাঁকা জমিই এখন এ ধরনের অসামাজিক কাজের আদর্শ আস্তানা হয়ে উঠেছে। কাজ হারিয়ে বহু মানুষ বেকার হয়েছেন। সেই সুযোগে নানা অসামাজিক চক্র প্রভাব বিস্তার করছে। দিনের আলো কমতেই শুরু হয়ে যায় তাস খেলা, সঙ্গে জুয়ার টাকার হিসাব। এলাকার তরুণদের একাংশ, যুবকেরাও ক্রমশ জুয়া খেলায় আকৃষ্ট হচ্ছেন। পুলিশের দাবি, এই প্রবণতা রুখতে লাগাতার অভিযান চলছে। তবে শুধু পুলিশের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। এ সব বন্ধে প্রয়োজন এলাকাবাসীর সচেতনতা ও সামাজিক উদ্যোগ, জানাচ্ছে পুলিশই।
কল্যাণী শহরের প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, কারখানার সাইরেন বেজে উঠলে গোটা শহর জেগে উঠত। তখন চরম ব্যস্ততা ছিল। এখন সে সব কোথায়! চারদিকে শুধু কাজের জন্য হাহাকার। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার ফাঁকা জায়গাগুলো এখন সন্ধ্যে নামলেই জুয়ার ঠেকে পরিণত হয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। কল্যাণীকে এক সময় 'শিল্পনগরী' বলা হত। শহরের হারানো গৌরব ফেরাতে শুধু শিল্পই নয়, সামাজিক স্বচ্ছতাও ফেরানো জরুরি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)