Advertisement
E-Paper

গরু লুঠে বাধা, বৃদ্ধকে কুপিয়ে খুনের নালিশ

১৫ অগস্ট উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন থেকে বিএসএফ। সেই স্বাধীনতা দিবসের রাতেই বাংলাদেশী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বৃদ্ধকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৩
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মমতাজ। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মমতাজ। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।

১৫ অগস্ট উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন থেকে বিএসএফ। সেই স্বাধীনতা দিবসের রাতেই বাংলাদেশী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বৃদ্ধকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, সীমান্ত পেরিয়ে জনা তিরিশেক বাংলাদেশি দুষ্কৃতী হাইদার আলির (৬৫) গরু ছিনিয়ে নিয়ে যেতে বাধা পেয়ে তাঁকে খুন করে। তাঁর বাড়ি জলঙ্গি থানার চর উদয়নগর এলাকায়। শনিবার রাতের ওই ঘটনায় স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন স্ত্রী মমতাজ।

রাত দেড়টা নাগাদ এক দল বাংলাদেশি দুষ্কৃতী সীমান্ত পেরিয়ে জলঙ্গির চর চিলমারি গ্রামে ঢুকে ওই বৃদ্ধের দু’টি গরু ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। হাইদার বাধা দিতে গেলে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন স্ত্রী মমতাজ। বাংলাদেশের গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে ভারতের এই গ্রামটি। গ্রামের কাছে কাঁটাতারের বেড়া নেই। বিএসএফ জওয়ানেরা পাহারায় থাকার পরেও কী করে ওই দুষ্কৃতীরা গ্রামে ঢুকে এমন কাণ্ড করে বেরিয়ে গেল সে প্রশ্ন তুলে বিএসএফের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা।

গ্রামবাসীর দাবি, বিএসএফ আউটপোস্ট থেকে মেরেকেটে তিনশো মিটার দূরে হাইদারের বাড়ির। রাতের ঘটনার সময়ে প্রতিবেশীরা কয়েক জন সেখানে গিয়ে ঘটনার কথা বললেও ৪৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি বিএসএফ কর্তারা। তাঁদের কথায়, ‘‘এলাকাটি দুর্গম। কাছেই পদ্মা ছাড়াও নানা শাখা নদী রয়েছে। তা ছাড়া ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফলে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা এমন ঘটিয়েছে।’’ ডাকার পরেও আপনারা ঘটনাস্থলে গেলেন না কেন? উত্তর মেলেনি বিএসএফের কর্তাদের থেকে।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘ঘটনাটি উদ্বেগজনক। এ দিন বিএসএফের পক্ষ থেকে মিটিং করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হবে।’’ ওই এলাকায় পুলিশ চৌকি করার কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সরকার পরিকল্পনা নিলে হবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইদার এবং তাঁর স্ত্রী মমতাজ বিবি চরের ওই বাড়িতে থাকেন। দুই ছেলে ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। তাঁদের পাঠানো টাকা আর দু’একটা গরু-ছাগল পুষে কোনও রকমে দিন চলত দম্পতির। শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ পঁচিশ-তিরিশ জনের একটি দল হানা দেয় ওই বাড়িতে। হাইদারের বউমা শুকতারা বিবি বলেন, ‘‘সম্বল বলতে গরু আর বাছুরটা। দিনভর ওই দুটোর পিছনেই পড়ে থাকেন। দুধ বিক্রি করে নুন-তেল-ওষুধের পয়সা জোটে। সন্তানের মতোই আদর করতেন গরু দুটোকে। ফলে দুষ্কৃতীরা গরু নিয়ে যাওয়ার সময়ে জাপটে ধরেছিলেন তিনি। সেই জন্যই তাঁকে কুপিয়ে খুন করেছে ওরা।’’

এটাই অবশ্য প্রথম নয়, বছর খানেক আগেও এলাকা থেকে এক জোড়া মোষ নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা। সে যাত্রায় গ্রামের মোড়লেরা আপোস করে মোষ দু’টি উদ্ধার করলেও এ বার আর শেষ রক্ষা হল না। ভারতীয় সীমান্তের গ্রাম হলেও বাংলাদেশীদের দাপট এই এলাকায় দীর্ঘ দিনের। ফসল কেটে নেওয়া থেকে ভারতীয়দের উপরে নানা অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে এই এলাকায়। দুষ্কৃতীদের ভয়ে গ্রামের মানুষ সন্ধ্যা নামার আগেই বিওপির সামনে বেঁধে রাখে গরু মোষ। এই অত্যাচার নিয়ে প্রশাসন থেকে বিএসএফ— সকলের কাছে বারবার দরবার করেও কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।

ঘোষপাড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য জাবদুল মণ্ডল বলেন, ‘‘মূলত ভুমিহীন মানুষেরা উপায় না পেয়ে এই এলাকায় বাস করে। চরের মাঠের ঘাসের উপরে নির্ভর করে দু’একটা গরু পুষে আর চাষবাস করে সংসার চলে। নিজের দেশ হলেও নিত্যদিন বিএসএফের নানা ফতোয়ার সামনে পড়তে হয়।’’ গ্রামবাসীর অনেকেই জানালেন, বিএসএফের ভরসাতেই তাঁরা এখানে বসবাস করার সাহস পান। কিন্তু, সীমান্তরক্ষীদের চৌকির পাশে বাস করেও যদি এ ভাবে খুন হতে হয় তা হলে নিরাপত্তা কোথায়?

ক্ষোভ ছ়ড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা জলঙ্গির জোনাল সম্পাদক সিপিএমের ইউনুস সরকার বলেন, ‘‘একজন বৃদ্ধকে কেবল দুটো গরুর জন্য প্রাণ দিতে হল। আর বিএসএফ সব জেনেও কাজের কাজ কিছুই করল না!’’ একই অভিযোগ, জলঙ্গির ব্লক কংগ্রেস নেতা আব্দুর রাজ্জাকেরও। তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসব। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামব।’’

bangladeshi miscreants jalangi murder cow traffickers cow plundering bangladeshi murderers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy