আব্দুল কাদের মোল্লা।
অনেকেই হয়তো লোকটাকে বোকা বলে ভাবছি। বোকা না হলে বিপদ আছে জেনে কেউ ঝুঁকি নিয়ে সটান নেমে পড়ে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে! অনেকেই বলছেন, এ নাকি আত্মহত্যার সমান। এমন বোকামি কেউ করে? আমার বন্ধু আব্দুল হাকিম মণ্ডল আসলে এমনটাই। এক্কেবারে বোকা। আর ওর মতো বোকারা আছে বলেই এখনও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পারে কত মানুষ। এ দিন অবশ্য হাকিম হেরে গেল। চার পাশে আমরা সবাই গেল গেল করছি। কিন্তু কেউ কিছু করতে পারছি না। সেই সময় হাকিম ঢুকল ভিড় ঠেলে। মোবাইলটা আমার হাতে ধরিয়ে দিল। বাধা দিয়েছিলাম। শুনল না। বলল, ‘গ্রামের দু’টো ছেলে এ ভাবে মারা যাচ্ছে। আর সেটা আমি দাঁড়িয়ে দেখব নাকি?’ নেমে গেল বীরদর্পে। উঠে এল নিথর দেহ।
শুধু এ বার নয়, গ্রামের কারও কোনও বিপদ-আপদে হাকিমই ছিল মুশকিল আসান। কাউকে পাওয়া না গেলে ওকে পাওয়া যাবেই। ২০০০ সালের বানের দৃশ্য চোখে ভাসে। জলঙ্গি সে বার উপচে পড়ছে। চারদিকে থই থই জল। দূরে দেখা মিলছে কারও বাড়ির চাল তো কোথাও ভেসে যাচ্ছে খড়ের গাদা। বিকেলের দিকে এমনই একটি খড়ের গাদা ভেসে যাচ্ছিল স্রোতের টানে। নিজের শেষ সম্বলটা রক্ষা করতে গিয়ে জলে ঝাঁপ দেন দুলু হালুই। কিন্তু জলের ওই তোড়ে খড়ের গাদা আটকানো কি মুখের কথা! ওই অবস্থায় কে বাঁচাবে দলুকে? কোথা থেকে ছুটে এসেছিল হাকিম। বিপদ জেনেও কোমরে দড়ি বেঁধে সে দিন দুলুকে উদ্ধার করেছিল। বছর পাঁচেক আগে হাকিমের সঙ্গে আমার আলাপ। আমার বইয়ের দোকানে প্রায়ই আসত। শনিবারেও এসেছিল। সেই মানুষটাকে এই ভাবে চোখের সামনে মরতে দেখব, স্বপ্নেও ভাবিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy