Advertisement
E-Paper

ঝান্ডা গেঁথে দখল বাড়ি

বাড়িতে অনেক দিন লোক নেই। সেই সুযোগে তালা ভেঙে, তৃণমূলের ঝান্ডা গুঁজে বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠল নবদ্বীপের এক ক্লাবের বিরুদ্ধে।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০২
সেই বাড়ি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

সেই বাড়ি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

বাড়িতে অনেক দিন লোক নেই। সেই সুযোগে তালা ভেঙে, তৃণমূলের ঝান্ডা গুঁজে বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠল নবদ্বীপের এক ক্লাবের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ, নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মলকান্তি দেবের প্রশ্রয়েই বাড়িটি দখল করা হয়েছে। দোতলায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্লাবেরই এক সদস্যের পরিবারকে। বাড়ির মালিকরা পরপর দু’দিন নবদ্বীপ থানায় যাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি।

বুধবার কৃষ্ণনগরে গিয়ে নদিয়ার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান তিন ভাই। তাঁদের বক্তব্য, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তুড়োপা়ড়ায় জেড় কাঠা জমির উপরে দোতলা বাড়িটি ছিল তাঁদের মা বেলা ভদ্রের নামে। ২০০২ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে তিন ছেলে চণ্ডীচরণ, দুলালচন্দ্র এবং প্রসাদচন্দ্র সেটির মালিকানা পান। কিন্তু কর্মসূত্রে প্রসাদচন্দ্র কাঁচরাপাড়ায়, দুলালচন্দ্র পায়রাডাঙায় থাকেন। চন্ডীচরণ এখন থাকেন নবদ্বীপেরই রণকালীতলায়। মাঝে-মধ্যে তাঁরা এসে বাড়ি পরিষ্কার করাতেন। বছরখানেক আগে তালা ভেঙে বাড়ির দেখল নেয় ‘উইন ক্লাব’ নামে শাসকদল ঘনিষ্ঠ একটি ক্লাব।

প্রসাদচন্দ্রের অভিযোগ, বাড়িটি খালি করতে বললে ক্লাবের কর্মকর্তা ধ্রুব রায় ৫ লক্ষ টাকায় বাড়িটি তাঁকে বিক্রি করে দিতে বলেন। তিনি তাতে রাজি হননি। ‘‘আমরা পুরপ্রধান ও স্থানীয় কাউন্সিলরের সাহায্য চাইলে ওঁরা ক্লাবের ছেলেদের কিছু টাকা দিয়ে সমঝোতা করে নিতে বলেন। পরপর দু’দিন নবদ্বীপ থানায় যাই অভিযোগ জানাতে। সাব-ইন্সপেক্টর না থাকায় এফআইআর নেওয়া যাবে না জানিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয় থানা’’ — অভিযোগ প্রভাসচন্দ্রের। ধ্রুব রায় ছাড়াও মঙ্গল রায় ও এলাকার আরও কয়েক জন এতে যুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

কী বলছেন নেতারা?

পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহার দাবি, “বাড়ি দখলের বিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ জানাতে আসেনি। ফলে ক্লাবের ছেলেদের টাকা দিতে বলার প্রশ্নই আসে না।” ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্মলকান্তি দেব বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। আমরা কাউকে বাড়ি দখল করতে মদত দিইনি।” তবে তিনি যে বাড়ির মালিকদের ক্লাবের ছেলেদের সঙ্গে ‘আলোচনা’য় বসতে বলেছিলেন, তা কাউন্সিলর অস্বীকার করতে পারেননি। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ওঁরা বাড়ি দখলের অভিযোগ এনেছিলেন বলেই আলোচনা করতে বলেছিলাম। আমি শুনেছি, এক অভিযোগকারীই নাকি বাড়িটি দেখভালের জন্য ক্লাবকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।’’

ধ্রুব-মঙ্গলেরাও দাবি করেন, বছর পনেরো আগে চন্ডীচরণই ক্লাবকে ওই বাড়ি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে চন্ডীচরণ বলেন, “আমরা কাউকে বাড়ি দেখভালের দায়িত্ব দিইনি। ওরাই তালা ভেঙে বাড়ির দখল নিয়েছে।” জোরজুলুম যে হচ্ছে, তার ঈঙ্গিত স্পষ্ট মঙ্গল রায়ের কথাতেই। তিনি বলেন, ‘‘এখন ওরা প্রোমোটারকে বাড়িটি বিক্রি করতে চাইছে। আমরা বলেছি, বাড়িটি যেন ক্লাবকেই বিক্রি করা হয়।’’ তাঁদের কাছেই কেন বিক্রি করতে হবে, সেই প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।

বেদখল হওয়া বাড়ির দোতলায় আপাতত সপরিবার বসবাস করছেন ক্লাবের সদস্য বিভাস দাস। সরকারি প্রকল্পে তাঁর বাড়ি তৈরি হচ্ছে। ‘‘সেই জন্য ক্লাবই মাসছয়েক আগে আমায় এখানে থাকতে দিয়েছে। ভাড়া লাগে না, শুধু বিদ্যুতের বিল মেটাই’’— বলেন বিভাস।

কেন অভিযোগ নেয়নি নবদ্বীপ থানা? এসআই না থাকলে অভিযোগ নেওয়া যাবে না, এটা কোন দেশি নিয়ম? জেলার এক পুলিশকর্তা মেনে নেন, এমন কোনও নিয়ম আদৌ নেই। বরং অভিযোগকারীকে ফেরানো যাবে না বলে নির্দেশ আছে মুখ্যমন্ত্রীর। তবে পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি শুধু বলেন, ‘‘অভিযোগপত্র হাতে পেলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।” জেলাশাসক সুমিত গুপ্তও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

Illegal Occupancy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy