E-Paper

বিদ্যালয় শুরুর আধ ঘণ্টার মধ্যেই ছুটির ঘণ্টা

আমাদের সে দেশে মন টেকেনি, বছর তিনেক পরেই দেশের টানে আবার ফিরে আসি পাবনা থেকে। আর তার ঠিক পরপরই শুরু হয় একাত্তরের যুদ্ধ।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৫ ০৯:৪১
Share
Save

তখন বছর ১৩-১৪ বয়স হলেও সে সময়ের ছবি মনের আয়নায় পরিষ্কার ভেসে ওঠে জলঙ্গির নওদাপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের।

তিনি বলেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে আমাদের পরিবার চলে গিয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। খুব ভাল করে মনে আছে পাকিস্তানে তখন ৪৫ পয়সা অর্থাৎ ৯ আনা কেজি ছিল চাল। এক সের দুধ পাওয়া যেত ১২ পয়সা অর্থাৎ ২ আনা দিলেই। আর ইলিশ মাছ নেওয়ার লোক ছিল না। কিন্তু সেই যাওয়াটা খুব বেশি দিনের স্থায়ী হয়নি। আমাদের সে দেশে মন টেকেনি, বছর তিনেক পরেই দেশের টানে আবার ফিরে আসি পাবনা থেকে। আর তার ঠিক পরপরই শুরু হয় একাত্তরের যুদ্ধ। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সে দেশের আত্মীয়রা ভিড় জমিয়েছিলেন আমাদের বাড়িতে। পাবনার বর্ধিষ্ণু এক আত্মীয় পরিবারের সঙ্গে ঘোড়া নিয়ে এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। সেই ঘোড়ার পিঠে চেপেই শিখেছিলাম ঘোড়া চালানো।’’

তাঁর দাবি, ‘‘সে সময় ক্লাস সিক্সে পড়ি সাদিখাঁরদিয়াড় বিদ্যানিকেতনে। হঠাৎ করেই এক দিন ক্লাস শুরুর আধ ঘণ্টা পরে ঢং ঢং করে বেজে উঠল ছুটির ঘণ্টা। হইচই করে আমরা ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই শিক্ষকেরা বললেন, ‘তোমরা সবাই বাড়ি চলে যাও। পাকিস্তান থেকে শরণার্থীরা আসছে, তারা স্কুলেই থাকবে।’ প্রায় সব ছাত্ররা বাড়ি চলে গেলেও আমি ঘরে ফিরিনি। কখন শরণার্থীরা আসবেন, তাঁরা কেমন দেখতে সেই অপেক্ষায় ঠায় বসেছিলাম স্কুলের বাইরের রাস্তায়। দুপুর গড়াতেই দেখলাম দলে দলে মানুষ মাথায়, কোলে পুঁটলি নিয়ে আসছেন স্কুলের দিকে।’’ তিনি বলেন, ‘‘ছোট হলেও খুব মনে আছে সেই মুখগুলো। মুখটা দেখে বুঝতে পেরেছিলাম দেশ ছাড়ার যন্ত্রণা কতটা। পরে শরণার্থীদের সেবা করার জন্য স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে নাম লিখেছিলাম আমি। তাদের খাবারের সময় নুন দেওয়া, জল দেওয়ার দায়িত্ব ছিল আমার।’’

মোশারফ বলছিলেন, মিলিটারি ট্রাকে করে আসত খাবারের সরঞ্জাম। বিহারী রাঁধুনী রান্না করতেন খিচুড়ি। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও সেই খাবার খেতাম দুপুরে। পরে শরণার্থী পরিবারদের চাল ডাল আলু আর কয়লা দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আর একটা বিষয় খুব ভাল করে মনে পড়ে। এক দিন স্কুলের উপর দিয়ে দুটো যুদ্ধবিমান খুব নীচ দিয়ে একেবারে ঝড়ের গতিতে চলে গিয়েছিল। তার হাওয়ায় স্কুলের সারি দেওয়া নারকেল গাছগুলো পর্যন্ত কাঁপছিল।’’

মোশারফ বলেন, ‘‘আরও একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে। যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তানি দুই সেনা চর এলাকার একটি বাড়িতে এসে জল খাবার চাইছিল। সেই বাড়ির লোক না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত মাঠের দিকে গিয়ে কাঁচা পেঁয়াজ তুলে খেয়েছিল তারা। দাপুটে পাকিস্তানি সেনাদের সেই অসহায় মুখগুলোও খুব মনে পড়ে আমার।’’

খুব ভাল করে মোশারফের মনে পড়ে, এক দিন স্কুলের উপর দিয়ে দুটো যুদ্ধবিমান খুব নীচে দিয়ে একেবারে ঝড়ের গতিতে চলে গিয়েছিল। তার হাওয়ায় স্কুলের সারি দেওয়া নারকেল গাছগুলো পর্যন্ত কাঁপছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalangi

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।