গরমে মাছের যত্ন নিতে ঢালা হচ্ছে ঠান্ডা জল। —নিজস্ব চিত্র।
কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিসের মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে বিস্কুট নিয়ে দাঁড়ালেই দল বেঁধে ছুটে আসত ওরা। কিন্তু ক’দিন ধরে শত ডাকাডাকিতেও দেখা মিলছে না তাদের। প্রচণ্ড গরমে কেউ গাছের ছায়ায় বসে ঝিমোচ্ছে, কেউ নর্দমার জলে গা ডুবিয়ে বসে রয়েছে। কেউ আবার জুতসই কিছু না পেয়ে জিভ বের করে হাঁফাচ্ছে। এ তো গেল পাড়ার নেড়িদের অবস্থা।
ওদিকে জিমি যেমন কিছু মুখেই তুলতে চাইছে না। প্লুটোর সারা শরীরে র্যাশ। টমি আবার সারাক্ষণ ওয়াশরুমের ভিজে মেঝেয় শুয়ে থাকছে। এরা জাতে গোল্ডেন রিট্রিভার কিংবা জার্মান স্লিজ।
তীব্র গরমে কুকুর তো বটেই, অ্যাকোরিয়ামের রঙিন মাছ থেকে শুরু করে অন্যান্য পশু-পাখিও রীতিমতো নাজেহাল হয়ে পড়েছে। যাঁরা পশু-পাখি পোষেন তাঁরাও এই গরমে পোষ্যদের ভাল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। যেমন কৃষ্ণনগরের কুকুর ব্যবসায়ী সুদীপ কুণ্ডুর বাড়িতে এখন ১০টি বিভিন্ন জাতের কুকুর রয়েছে। তিনি জানান, কুকুরদের জন্য সবসময় এসি বা কুলার চালাতে হচ্ছে। দিন দু’তিন বার নুন চিনির জল। আর দুপুরের খাবারের সঙ্গে তিনি টক দই খাওয়াচ্ছেন।
সুদীপবাবুর পরামর্শ, যাঁদের বাড়িতে এসি নেই, তাঁরা কুকুরকে বাড়ির কোনও ঠান্ডা জায়গায় কুকুরকে রাখুন আর সপ্তাহে অন্তত দু’দিন স্নান করান। আর রোজ একবার ভিজে তোয়ালে দিয়ে গা মুছিয়ে দিলেও কুকুররা ভাল থাকবে। কৃষ্ণনগরের অমিত নন্দীর বাড়িতেও পাঁচটি বিদেশি কুকুর রয়েছে। অমিতবাবু গরমের জন্য সব কুকুরকে একতলার ঘরে নিয়ে এসেছেন। তাদের গায়ের লোমও কেটে দেওয়া হয়েছে। আর রাস্তার নেড়িদের জন্য তিনি সানশেডের তলায় বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছেন।
গরমে কাহিল অ্যাকোয়ারিয়ামের রঙিন মাছেরাও। কৃষ্ণনগরের রাজু বিশ্বাস, সৌরভ চক্রবর্তীরা দীর্ঘদিন ধরে রঙিন মাছের ব্যবসা করছেন। তাঁরা জানান, অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভাল থাকে। তাই এই গরমে প্রতিদিন তিন ভাগের এক ভাগ জল ফেলে দিয়ে তাপমাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা চলছে। তবে এর বেশি জল দিলে নতুন জলে রোগের আক্রমণের ভয় থাকে। আর সপ্তাহে একদিন তাঁরা মাছকে কোনও খাবার দিচ্ছেন না। সপ্তাহে একদিন ছত্রাক নাশক ওষুধ অ্যাকোয়ারিয়ামে দিচ্ছেন। দেশি মাছ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে পুকুরের জল শুকিয়ে যাওয়ায়।
বাদকুল্লার আশুতোষ সরকার পাখির ব্যবসা করেন। গত কয়েকদিনে গরমে ও ডায়েরিয়ায় ১৫টি বদ্রি পাখি মারা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সারাদিন ঘরে পাখা চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। জল রাখতে হচ্ছে খাঁচায়। তারপরেও গরমে কাহিল হয়ে ঝিমোচ্ছে ককটেল, লাভবার্ডের মতো পাখি। কৃষ্ণনগরের পশু হাসপাতালের চিকিৎসক অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায় জানান, এই সময়ে পাখির সমস্যা নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে আসছেন। খাঁচার মধ্যে পাখি থাকলে বড় পাত্রে ঠান্ডা জল রাখতে হবে। যাতে পাখিগুলি সেই জল খাওয়ার পাশাপাশি স্নানও করতে পারে। জলে ওআরএস মিশিয়েও খাওয়ানো যেতে পারে। এই সময় পাখিদের গ্রিন ডায়েরিয়া ও চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ওযুধ দিতে হবে। খাবারে অরুচি দেখা দিলে পাখিদের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ফল ও কুকুরকে স্যুপ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গরমে রেহাই মিলছে না গবাদি পশুদেরও। বেথুয়াডহরি পশু হাসপাতালের চিকিৎসক সুজিত বিশ্বাস জানান, গরমে গরু খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে দুধও দিচ্ছে কম। এ ক্ষেত্রে গরুকে দিনে দু’তিন বার স্নান করাতে হবে। গরু-ছাগলের খাদ্য তালিকায় গুড় ও লবণ মেশানো জল রাখতে হবে। বারাসাত সরকারি মহাবিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান দেবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গরমে নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ায় জলের প্রাণীরা নানা রোগে কষ্ট পাচ্ছে। জলের অভাবে মারা যাচ্ছে। সব থেকে কষ্টে রয়েছে বনের পাখি। চার দিকে বৃক্ষনিধন, বহুতল নির্মাণ, পরিবেশ দূষণের জন্য তারা বাসা হারাচ্ছে।’’ তাঁর পরামর্শ, বাড়ির উঠোনে বা ছাদে একটু ছায়া, জলের পাত্রের বন্দোবস্ত করলে পাখিরা সেই জলে স্নান করে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিতে পারবে। কৃষ্ণনগরের রেঞ্জার অমলেন্দু রায় বলেন, ‘‘বেথুয়াডহরি, বাহাদুরপুরের মতো সরকারি বনাঞ্চলগুলির মধ্যে যে জলাশয় আছে তাতে যাতে সবসময় জল থাকে সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy