Advertisement
E-Paper

বৃষ্টি মাথায় করে অন্নকূট নবদ্বীপে

উৎসবের সঙ্গে খাবারের সবসময় একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। তবুও বিবিধ অন্নব্যঞ্জনই বকলমে দেবতা হয়ে উঠেছেন, এমন উৎসব তেরো পার্বণের দেশেও খুব বেশি নেই। ব্যতিক্রম অন্নকূট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৮
নবদ্বীপের মহাপ্রভু মন্দিরে অন্নকূট। ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নবদ্বীপের মহাপ্রভু মন্দিরে অন্নকূট। ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

উৎসবের ত্র্যহস্পর্শ বোধহয় একেই বলে!

বৃহস্পতিবার কালীপুজো, শুক্রবার অন্নকূট, শনিবার ভাইফোঁটা। বৃষ্টিভেজা শুক্রবার দিনভর নবদ্বীপ ব্যস্ত থাকল অন্নকূটে।

উৎসবের সঙ্গে খাবারের সবসময় একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। তবুও বিবিধ অন্নব্যঞ্জনই বকলমে দেবতা হয়ে উঠেছেন, এমন উৎসব তেরো পার্বণের দেশেও খুব বেশি নেই। ব্যতিক্রম অন্নকূট। মূলত বৈষ্ণব মন্দিরের উৎসব হলেও বহু বাড়িতেও অন্নকূট হয়। দেবতার ভোগে অন্নব্যঞ্জন পাহাড়ের মতো চুড়া করে সাজিয়ে নিবেদন করা হয় এ দিন।

মঠ-মন্দিরের প্রধানেরা জানিয়েছেন, অন্নকূটের প্রতিটি পদের ভিন্ন ভিন্ন নাম এবং ইতিহাস রয়েছে। তাদের রান্নার পদ্ধতিতেও আছে রকমফের। কিন্তু দেববিগ্রহের সামনে অন্নব্যঞ্জনের এই মহোৎসব বৈষ্ণবদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

কথিত আছে, এক বার কৃষ্ণ ব্রজদের ইন্দ্রপুজো বন্ধ করে গিরিরাজ গোবর্বধনের পুজো করতে বলেন। কেননা গোবর্বধন পাহাড়ই ব্রজবাসীদের জীবন-জীবিকার প্রধান আশ্রয়। তাই তাঁরই পুজো করা উচিত। পুজো বন্ধ হওয়ার সংবাদে কূপিত ইন্দ্র ঝড়বৃষ্টি দিয়ে বৃন্দাবনকে ধ্বংস করতে চাইলে শ্রীকৃষ্ণ গোবর্বধন পাহাড়কে এক আঙুলে করে তুলে ধরে ব্রজবাসীদের রক্ষা করেন। ইন্দ্রের ভয়ঙ্কর বজ্রের আঘাত নিজ অঙ্গে ধারণ করেন গোবর্বধন। ব্রজবাসীরা তার পর থেকে সেই তিথিতে গিরিরাজ গোবর্বধনকে উদ্দেশ্য করে যে উৎসবের আয়োজন করেন, তাই অন্নকূট নামে পরিচিত।

নবদ্বীপে যে কোনও বৈষ্ণব মন্দিরে দুধসাদা, সুগন্ধী গোবিন্দভোগের অন্ন পাহাড়ের মত স্তূপাকারে সাজানো থাকে। রকমারি খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সেই অন্নের উপর অলঙ্করণ করা হয় দেবতার মুখ। বিগ্রহের সামনে থরে থরে সাজানো থাকে সেই অন্নদেবতা-সহ শতাধিক পদের ভোগ। কয়েকশো মাটির থালায় সাজানো হয় খাবার।

কালীপুজোর এক দিন পরে সুখাদ্যের বিপুল উৎসব অন্নকূটের ভোগে শাক দিয়েই চোদ্দো-পনেরো রকমের পদ থাকে। থাকে সাত-আট রকমের ডাল, শাকসব্জি দিয়ে পঞ্চাশটিরও বেশি পদ। ছানা, পনির, ধোঁকা ও নানা ধরনের বড়ার ডালনার সঙ্গে থাকে নানা ধরনের চাটনি ও আচারের পদ। সব শেষে মিষ্টি। রসগোল্লা, সন্দেশের পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছে নাড়ু, মোয়া, খাজা, গজা, রসবড়া, দরবেশ, মালপোয়ার মতো ঘরোয়া মিষ্টিও।

নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমিতির কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘সমস্ত বৈষ্ণব মন্দিরে চেষ্টা করা হয়, যত বেশি সম্ভব পদ অন্নকূটে দেবতাকে নিবেদন করা। কমপক্ষে ছাপান্ন ভোগ দিতেই হয়। আসলে দেবতা এ দিন খাদ্যরূপে বিরাজ করেন।’’

নবদ্বীপের প্রায় সব মঠ-মন্দিরেই অন্নকূট পালিত হয়। ধামেশ্বর মহাপ্রভুর মন্দির, হরিসভা মন্দির, বলদেব মন্দির, মদনমোহন মন্দির, গোবিন্দবাড়ি, রাধারানি মন্দির, সমাজবাড়ি বা শ্রীচৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের মতো বিভিন্ন মন্দিরেই ছবিটা কমবেশি একই রকম থাকে। অন্নকূটের এক থালা প্রসাদের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান বহু মানুষ। দামের জন্য পরোয়া নেই। উত্তরভারতের এই খাদ্য উৎসব নিজের মতো করে বদলে নিয়েছে পূর্বভারতের মঠ-মন্দিরগুলি।

Annakut Festival Nabadwip
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy