Advertisement
E-Paper

লক আপে পিটিয়ে ছাত্রকে নিজের পরিচয় দিল পুলিশ

দোষ বলতে, সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ কর্মীকে পাল্টা প্রশ্ন করে বসে ছিলেন— ‘‘আপনি কে, গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে হলে পুলিশকে দেখাব, আপনাকে কেন!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩৩

দোষ বলতে, সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ কর্মীকে পাল্টা প্রশ্ন করে বসে ছিলেন— ‘‘আপনি কে, গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে হলে পুলিশকে দেখাব, আপনাকে কেন!’’

পুলিশকে চিনতে না-পারার সেই খেসারত গুনছেন কল্যাণীর একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র উত্তম বিশ্বাস।

রানাঘাট হাসপাতালের শয্যা থেকে উত্তম বলছেন, ‘‘আমি পাল্টা তাঁর পরিচয় জানতে চাওয়া মাত্রই আমাকে সটান এক চড় কষিয়ে দিলেন। তার পর গালাগাল। ফোন করে থানা থেকে ডেকে পাঠালেন জনা তিনেক কনস্টেবলকে। থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে তার পর...।’’ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে যুবকের মুখ।

কী হয়েছিল?

উত্তমের অভিযোগ, কাকিমাকে মোটারবাইকের পিছনে বসিয়ে আন্দুলপোতা গ্রামের ওই ছাত্র গিয়েছিলেন ধানতলায় ডাক্তার দেখাতে। বুধবার বিকেলে, ফেরার সময়ে আচমকাই পড়ে গিয়েছিলেন ধানতলা থানার ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর (এএসআই) দেবাশিস ঘোষের সামনে। কোনওমতে ব্রেক কষে গাড়ি থামালেও পিছনের আসন থেকে পড়ে গিয়েছিলেন কাকিমা অরুন্ধতীদেবী।

বিপত্তির শুরু এর পরেই। উত্তম এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাদা পোশাকে তখন থানার দিকেই যাচ্ছিলেন ওই পুলিশ কর্মী। তিনি উত্তমের কাছে গাড়ির কাগজপত্র চেয়ে বসেন। সাদা পোশাকে থাকায় তিনি যে পুলিশ কর্মী তা বুঝতে পারেননি উচত্তম। তাই অবাক হয়েই পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আপনাকে কেন কাগজপত্র দেখাব!’’

আর তার পরেই শুরু হয় পুলিশের ‘ক্ষমতা প্রদর্শন’। প্রথমে অকথ্য গালমন্দ। তার পর চড় থাপ্পর, সব শেষে সহকর্মীদের ডেকে থানায় তুলে নিয়ে য়াওয়া।

উত্তমের বাবা ফটিক বিশ্বাস আটপৌরে চাষি। তিনি বলেন, ‘‘ওর কাকিমা খবর দেন উত্তমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। থানায় গিয়েও ছেলের সঙ্গে দেখা হয়নি। পরের দিন যখন ছাড়ল তখন ওকে দেখে চেনার উপায় নেই।’’

তিনি জানান, পা ফোলা, হাঁটতে পারছে না। ঠোঁটের কোণ ফুলে গিয়েছে, কপাল ঢিপ, চোখের তলায় কালশিটে— ওই অবস্থায় উত্তমকে নিয়ে গিয়ে তিনি ভর্তি করান রানাঘাট হাসপাতালে। ওই ছাত্রের মা নীলিমাদেবীর কথায়, “আমার ছেলেটা কি সমাজবিরোধী, নাকি খুনি? কারও পরিচয় জানতে চাইলে এ ভাবে কাউকে মারধর করে নাকি?’’

শুধু মারধরই নয়, উত্তমের অভিযোগ, লক আপে মারধরের করেই ক্ষান্ত হননি পুলিশ কর্মীরা। কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁর আঙুলের সোনার আংটি, হাতঘড়ি মোবাইল আর সঙ্গে থাকা নগদ আড়াই হাজার টাকা। উত্তম বলেন, ‘‘মারধর করার পরে সব কেড়েকুড়ে নিল তার পরে চাপা গলায় শুরু হল শাসানি, ‘অন্য কেসে ফাঁসিয়ে দেব, কাউকে বললে বাড়ি থেকে তুলে এনে ফের মারব।’’

হাসপাতালের এক চিকিৎসকও জানান, ওই যুবকের চোট বেশ গুরুতর। মাথা, পাঁজরে চোট রয়েছে।

এ ব্যপারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তমের পরিবারের লোকজন দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে ধানতলা থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। দোষী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রানাঘাটের এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ বসুর কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

ইন্দ্রজিৎবাবু বলেন, “হ্যাঁ, একটা অভিযোগ পেয়েছি। তবে, অভিযোগ পেলেই তো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

আর ধানতলা থানার ওই এএসআই দেবাশিস? তিনি বলেন, ‘‘যা বলার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বলব, আপনাকে নয়।’’

student allegedly beaten Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy