Advertisement
E-Paper

দুর্নীতি-কথা শুনলেন অনুব্রত

কখনও খারাপ ফলের জন্য বুথ ও  ব্লক স্তরের নেতাদের ধমকালেন, কখনও বললেন লোকসভা ভোটে বেশি ‘লিড’ দিলে ভাল পুরস্কার দেওয়া হবে। নদিয়ায় তাঁর দ্বিতীয় কর্মিসভায় এ ভাবেই নরমে গরমে কর্মীদের বার্তা দিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি।  

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৬
তৃণমূলের কর্মিসভায় অনুব্রত মণ্ডল। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

তৃণমূলের কর্মিসভায় অনুব্রত মণ্ডল। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

কখনও খারাপ ফলের জন্য বুথ ও ব্লক স্তরের নেতাদের ধমকালেন, কখনও বললেন লোকসভা ভোটে বেশি ‘লিড’ দিলে ভাল পুরস্কার দেওয়া হবে। নদিয়ায় তাঁর দ্বিতীয় কর্মিসভায় এ ভাবেই নরমে গরমে কর্মীদের বার্তা দিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি।

দলনেত্রী তাঁকে নদিয়ার সংগঠন দেখতে বলার পরে তেহট্টে প্রথম সভা করেছিলেন অনুব্রত। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে ঘূর্ণী হাইস্কুলের মাঠে হল সদর মহকুমার প্রশিক্ষণ শিবির। এবং অনুব্রতের সামনেই নিচুতলার কর্মীরা অনেকে স্বীকার করে নিলেন দলের কোন্দলের কথা। সে জন্য অনেক জায়গায় ফল খারাপ হয়েছে বলেও মেনে নিলেন।

শুরুতেই সভার সুর বেঁধে দিয়ে যান করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। তাঁর পরামর্শ, পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব দিতে হবে। বুথ কমিটি গঠন না করেই অনেকে নেতাদের দেখানোর জন্য সাজিয়ে আনেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

পঞ্চায়েত ভোটে কৃষ্ণনগর ১ ও ২ ব্লকে ভাল ফল করেছে বিজেপি। প্রথমেই কৃষ্ণনগর ১ ব্লক সভাপতিকে অনুব্রত জিজ্ঞাসা করেন, সেখানকার পরিস্থিতি কী? পরে চকদিগনগরের অঞ্চল সভাপতির কাছে জানতে চান, বুথ কমিটিকে নিয়ে ক’টা বৈঠক হয়? তিনি জানান, মাসে তিন-চারটি হয়। নিজেদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয় কি না তাও জিজ্ঞাসা করেন অনুব্রত।

ভীমপুরে ২২টি আসনের মধ্যে দু’টি পেয়েছে তৃণমূল। অনুব্রত অঞ্চল সভাপতিকে বলেন, ‘‘লজ্জা লাগছে আপনার? এখন কী অবস্থা?’’ অঞ্চল সভাপতি বলেন, ‘‘এ বার আমরা ভাল ফল করব।’’ বুথ সভাপতি গোরাচাঁদ মণ্ডল অভিযোগ করেন, অঞ্চলের নেতাদের দুর্নীতির জন্যই ভীমপুরে হার। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি, সম্মান পাই না।’’ নিয়মিত সব বুথে বৈঠক হয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অনুব্রত বলেন, ‘‘অঞ্চল সভাপতিকে যদি একটু তুলে নিয়ে ওখানে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তা হলে কি ভাল হবে?’’ গোরাচাঁদ বলে, ‘‘নিশ্চিত। ভীমপুরের অঞ্চল সভাপতি সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত। আগে কখনও এ ভাবে বলতে পারিনি।’’

আসাননগরের অঞ্চল সভাপতিকে অনুব্রত বলেন, ‘‘আপনি তো সব ক’টাতেই তো হেরে বসে আছেন!’’ অঞ্চল সভাপতি অনুযোগ করেন, ‘‘আমাদের অনৈক্যই হারিয়েছে। কর্মীদের না ডেকেই অঞ্চল সভাপতি বদল হয়েছে। কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের পাঁচটা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত এক জন সভাপতি।’’ অনুব্রত বলেন, ‘‘বুক ফুলিয়ে তো বলতে পারবেন না এই ফলের কথা। দেখে তো মনে হচ্ছে না খারাপ লাগছে। জামা প্যান্ট ইস্ত্রি করে পড়ে এসেছেন কেন?’’ জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে অনুব্রত জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘১২টা অঞ্চলের জন্য দুটো ব্লক সভাপতি কেন?’’

নাকাশিপাড়াতেও বিজেপি ভাল ফল করেছে। সেখানকার নেতাদেরও অনুব্রত জিজ্ঞাসা করেন খারাপ ফলের কারণ। তাঁরা দাবি করেন, ভোটের আগে সেখানে বিজেপি সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করেছিল। মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে। অনুব্রত জানতে চান, ‘‘সেটা ঠেকাতে পারলেন না কেন?’’ নাকাশিপাড়ার এক বলেন, আগে ওই এলাকায় ভাল ফল হয়েছে। অনুব্রত বলেন, ‘‘সেই কবে মা মাছের ঝোল খাইয়েছে, সেটা এখন মনে করে রাখলে হবে!’’

উল্টোটাও আছে। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে দু’টি বাদে সব ক’টি পঞ্চায়েতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। সেখানকার জয়ঘাটা অঞ্চল সভাপতি গৌতম বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রার্থী বাছাইয়ে সমস্যা ছিল। সেই সমস্যার কথা উজ্জ্বলদা (বিশ্বাস), গৌরীদাকে জানিয়েছি।’’ অনুব্রত বলেন, ‘‘পুরনো লোকগুলোকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন? সবাইকে নিয়ে নিন।’’

চাপড়ার ব্লক সভাপতি জেবের শেখ বলেন, ‘‘আমাদের ব্লকে সব মিলিয়ে ১ লক্ষের বেশি ভোটে লিড ছিল পঞ্চায়েত ভোটে। লোকসভায় ৫০ হাজারের বেশি ভোটে লিড দেব।’’ অনুব্রত বলেন, ‘লিড কমবে কেন?’’ জেবের বলেন, ‘‘লোকসভা ভোট তো অন্য রকম ভোট। আপনি বলুন, কত লিড চান।’’ অনুব্রত বলেন, ‘‘তুমি যত দিতে পারবে, আমি তাতেই খুশি। যত বেশি লিড দিতে পারবে, তত ভাল পুরস্কার দেওয়া হবে।’’ সন্ধ্যামাঠপাড়ায় বিজেপির সভা নিয়েও এ দিন কটাক্ষ করতে ছাড়েননি অনুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘ওদের অমিত শাহ কোথায়? লোক নেই জন নেই, বড় বড় কথা!’’

Anubrata Mondal Corruption TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy