Advertisement
E-Paper

মাফুজার ডাকে ভয় ভেঙেছে 

শুধু ইশারা নয়, বিজেপি-যাত্রার স্পষ্ট ছায়াও আড়াআড়ি পড়েছে গাঁয়ে গঞ্জে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ০০:০৫

মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক এলাকা সুতি। জেলার অন্য এলাকাগুলির মতো ফরাক্কার এই ব্লকেও প্রাধান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন তো দূরস্থান, স্থানীয় গ্রামগুলিতে পদ্ম-কুঁড়ির কোনও আভাসও কস্মিনকালে ছিল না। লোকসভা নির্বাচনের পরে সেই সুতি-আহিরণ-ফরাক্কা জুড়েই লাইটপোস্ট থেকে গাছের ডাল— গ্রামের চৌমাথা থেকে মানুষের মনে গেরুয়া-ইশারা।

শুধু ইশারা নয়, বিজেপি-যাত্রার স্পষ্ট ছায়াও আড়াআড়ি পড়েছে গাঁয়ে গঞ্জে। দল বদলে বাম শিবির থেকে কংগ্রেসে তার পর পালা বদলে গেলে তৃণমূল— বদলের এই চেনা পথ ছেড়ে এ বার শাসক দল তৃণমূল থেকে গত কয়েক দিনে কর্মীদের বিজেপিতে পাড়ি দেওয়া দেখে তৃণমূলের এক জেলা নেতা গলায় যাবতীয় বিস্ময় ঢেলে বলছেন, ‘‘এটাও দেখতে হল, ভাবতেই পারিনি!’’

বিজেপি’র সভায় দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে শাসক দলের তাবড় নেতা-কর্মীরা দল ছাড়ছেন স্পষ্ট অনুযোগ এনে—‘সংখ্যালঘুদের প্রতি তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন অন্যায় আচরণ মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না!’ সংরক্ষণ থেকে ভাতা, যে সংখ্যালঘু ‘তোষণের’ কথা এত দিন বিজেপিই তাদের প্রচারের মূ? অস্ত্র করেছিল, তারই প্রতিদান কি না ‘তৃণমূলের অন্যায় আচরণ!’ কিঞ্চিৎ অবাক হয়েই কথাটা বিড়বিড় করছিলেন স্থানীয় এক বিজেপি কর্মী।

তা হলে কারণটা ঠিক কি? বিজেপির ঘরোয়া আসোচনায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, মাফুজা খাতুন। বহিরাগত বলে যে প্রার্থীকে এক সময় বিজেপি’ই আড়ালে মুখ ভেঙচে ছিল তাঁর কথা এবং অনায়াসে গ্রামীণ মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার ‘মুন্সিয়ানায়’ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীরাও এখন বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন।

শোভারঘাট থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রার্থী মহিরুদ্দিন শেখ তাই বলছেন, “পঞ্চায়েত ভোট লুট করেছে পুলিশ ও তৃণমূল। আমার বাড়িতে চড়াও হয়ে তান্ডব চালানো হয়েছে। কংগ্রেস নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তাই বিজেপি এলাম।’’ বাহাগলপুরের রেজাউল শেখও স্পষ্ট বলছেন, ‘‘বিজেপি নিয়ে যে ভীতি ছিল সংখ্যালঘুদের মধ্যে তা কেটে গিয়েছে। দলের নেতৃত্বে এসে মাফুজা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর আশ্বাসেই বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি।’’

মাফুজা ফ্য়াক্টরের পাশাপাশি তৃণমূলের দুর্নীতি একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছে তৃণমূলের নেতারা। দলের এক সংখ্য়ালঘু সম্প্রদায়ের নেতা বলছেন, ‘‘এ আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। দলে দলে কর্মী যে বিজেপি’র দিকে পা বাড়াচ্ছেন তার একটা কারণ যেমন মাফুজার ভীতি দুর করা আশ্বাস তেমনই দলের সীমাহীন দুর্নীতি। মানুষের কাছে মুখ দেখানো যাচ্ছে না।’’

শুধু সুতি নয়, খড়গ্রামের নগর এলাকাতেও মাপুজার ছায়া স্পষ্ট। তাঁর হাত ধরে এড়োয়ালি, পারুলিয়া, কীর্তিপুর, সাদল অঞ্চল থেকে গত কয়েক দিনে তৃণমূল-কংগ্রেস-সিপিএম ছেড়ে সাড়ে তিন হাজার বুথ স্তরের নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দিয়েছে বলে দাবি। বিজেপি-র যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকারের হাত ধরে প্রায় সাড়ে পাঁচশো কর্মী তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেয় বলেও দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। বিজেপির জেলা সভাপতি গৌড়িশঙ্কর ঘোষ তাই বলছেন, ‘‘কি বলব বলুন, বিজেপিতে যোগ দিতে হিড়িক পড়ে গেছে!’’ সেই হিড়িতে বেনোজল ঢুকছে হয়ত তবু যাত্রার তো বিরাম নেই!

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

BJP Murshidabad TMC Congress Minority Hinduism CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy