Advertisement
E-Paper

পিস্তল টর্চ, বাঁচার লাঠি ওয়ান শটার

সন্দেহটা হল ‘বাঁচার লাঠি’ ও ব্যাটারির সংখ্যায়। মুদির দোকানে ডাল-মশলা-ব্যাটারি না হয় পাওয়া গেল। কিন্তু বাঁচার লাঠি বস্তুটি কী? 

বিমান হাজরা ও মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০১:৪২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ছোলার ডাল— ১০ কেজি

মুসুর ডাল— ১০ কেজি

মশলা— ৫ কেজি

বাঁচার লাঠি— ১২টি

ব্যাটারি— ৫০টি

কাঁচা হাতের লেখায় আটপৌরে একটা বাজার করার তালিকা। কিন্তু সন্দেহটা হল ‘বাঁচার লাঠি’ ও ব্যাটারির সংখ্যায়। মুদির দোকানে ডাল-মশলা-ব্যাটারি না হয় পাওয়া গেল। কিন্তু বাঁচার লাঠি বস্তুটি কী?

অবশেষে মুর্শিদাবাদের রানিনগর সীমান্তের এক মুদির দোকানের মালিককে ধরে জেরা করার পরেই বেরিয়ে এল তালিকার আসল তথ্য। জেরায় সেই প্রৌঢ় জানান, ডাল হল ফেনসিডিল। ছোলা মানে বড় শিশি। আর মুসুর ছোটটা। ওয়ান শটারকে বলা হয় বাঁচার লাঠি। ছোট টর্চ পিস্তল, বড় টর্চ পাইপগান, মশলা মানে বোমার মশলা।

আর ব্যটারি?

পুলিশ আধিকারিকের ধমকে চট জলদি জবাব আসে, “আজ্ঞে গুলি স্যার। ওতেই তো টর্চ জ্বলে।”

সামান্য একটা লিস্ট সে বার খুলে দিয়েছিল বহু অজানা কোডের জট। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এই কোডও ক্ষণস্থায়ী। মাঝেমধ্যেই বদলে যায়। এখন হয়তো ব্যাটারির বদলে লেখা হচ্ছে চমচম, বোমার মশলাকে মিহিদানা। তবে আমরাও তক্কে তক্কে আছি।’’

পুলিশ যে ওত পেতে আছে সে কথা বিলক্ষণ জানে অস্ত্রের কারবারিরাও। তবুও চোর-পুলিশ খেলা চলতেই থাকে। মালদহ থেকে মুর্শিদাবাদ, কান্দি থেকে কল্যাণী কিংবা রানিনগর থেকে রানাঘাট অস্ত্র-দৌড় চলতেই থাকে।

সেই অস্ত্র কোথায়, কখন, কী ভাবে যাচ্ছে, কে নিয়ে যাচ্ছে সব খবর না থাকলে পাখি উড়ে যায়। আর সেটা যাতে না হয় তার জন্য পুলিশকে ভরসা করতে হয় ‘সোর্স’-এর উপরে। সোমবার সোর্স মারফত খবর পেয়ে ফরাক্কা থানার পুলিশ যেমন দেরি করেনি। সোর্স জানিয়েছিল, বয়স বছর পঁয়ত্রিশ। পরনে কালচে নীল প্যান্ট ও সাদা শার্ট। হাতে ব্যাগ আছে। বাস থেকে নামবে নিউ ফরাক্কায়। সোমবার কাকভোর থেকেই নিউ ফরাক্কা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষায় ছিল পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ পরে এল বাস।

আর পাঁচ জন যাত্রীদের সঙ্গে বাস থেকে নামল কালচে নীল প্যান্ট, সাদা শার্ট। হাতে ব্যাগ। একটু এগিয়ে গিয়ে এক রিকশা চালককে সে জানতে চাইল, ‘‘ঝাড়খণ্ড যাওয়ার কোন রাস্তা এখন খোলা?’’ রিকশা চালক নয়, উত্তরটা দিলেন সাদা পোশাকের এক পুলিশকর্মী, ‘‘আপাতত আমাদের সঙ্গে চল। পরে ঝাড়খণ্ড।’’

ধৃত মোক্তাজুল শেখ ওরফে ওহেদুরের বাড়ি মালদহের কালিয়াচক থানার করালি চাঁদপুর গ্রামে। তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দশ হাজার টাকার জাল নোট, ন’টি দিশি পিস্তল, ১৫ রাউন্ড গুলি। মোক্তাজুলকে এ দিন জঙ্গিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মোক্তাজুল কালিয়াচক থেকে অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিল ঝাড়খণ্ডে। তাকে জেরা করে কোন পথ দিয়ে ও কাদের সে অস্ত্র সরবরাহ করত তা জানার চেষ্টা চলছে।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, মোক্তাজুলের চেহারা ও আচরণ একেবারেই সাদামাটা। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সে এমন বিপজ্জনক কারবারে জড়িত। পুলিশ জানতে পেরেছে, এই সাদামাটা চেহারাটাও অস্ত্র কারবারিদের কাছে একটা ‘প্লাস পয়েন্ট’। যাতে সহজেই কেউ তাদের সন্দেহ করতে না পারে।

সম্প্রতি এক বৃদ্ধাকে মদনপুর স্টেশন থেকে বেশ কয়েকটি পিস্তল-সহ আটক করে পুলিশ। সেই বৃদ্ধা উঠেছিল শিয়ালদহ থেকে। পুলিশের কাছে নির্ভুল খবর ছিল। বৃদ্ধার ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে পড়ে বেশ কয়েকটি দিশি পিস্তল। জেরায় পুলিশ জানতে পারে, ওই বৃদ্ধা জানতেনই না, প্যাকেটের ভিতরে কী আছে। ওই ঘটনায় পুলিশ হরিণঘাটার এক জনকেও গ্রেফতার করে। সে মদনপুরে এসেছিল বৃদ্ধার কাছ থেকে ওই ব্যাগটি নিতে।

পুলিশের দাবি, সাধারণ মানুষ কিংবা কিশোরদেরও কাজে লাগাচ্ছে অস্ত্রের কারবারিরা। তারাও জানতে পারে না সামান্য টাকার বিনিময়ে তারা কী ভয়ঙ্কর কাজ করে ফেলছেন!

(সহ প্রতিবেদন: সুজাউদ্দিন)

Murshidabad Arms মুর্শিদাবাদ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy