Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ের গীতেও সেই যন্ত্রণার কথা

মধ্যযুগে মেয়েদের বিয়েও যেন অনেকটা তেমনই ছিল। সেই ছড়াটা কমবেশি অনেকেরই মনে আছে—‘‘শিবঠাকুরের বিয়ে হল তিন কন্যা দান/ এক কন্যা রাঁধেন বাড়েন এক কন্যা খান/ আর এক কন্যা গোসা করে বাপের বাড়ি যান।’’

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৬
Share: Save:

সমাজ-সংসার থেকে আজও নারী কাঙ্ক্ষিত মর্যাদা আদায় করতে পারেনি। তবুও অতল অন্ধকার থেকে নারী আজ কিছুটা পথ আলোর দিকে হেঁটে এসেছে। এখন কর্পোরেট বাজারে একটি পোশাক কিনলে অনেক ক্ষেত্রে দু’টো ফাউ মেলে। মধ্যযুগে মেয়েদের বিয়েও যেন অনেকটা তেমনই ছিল। সেই ছড়াটা কমবেশি অনেকেরই মনে আছে—‘‘শিবঠাকুরের বিয়ে হল তিন কন্যা দান/ এক কন্যা রাঁধেন বাড়েন এক কন্যা খান/ আর এক কন্যা গোসা করে বাপের বাড়ি যান।’’

সে কালে শিবঠাকুরের আপন দেশে মেয়েদের বিয়ে হত না। হত গৌরীদান। এ কালই বা কম যায় কীসে! পৌরাণিক যুগ থেকে শুরু করে আজকের কর্পোরেট যুগেও কৃষক থেকে গবেষক— প্রায় সবাই বিয়ে করতে যাওয়ার আগে বলেন, ‘‘মা! তোমার জন্য দাসী আনতে গেলাম!’’ নারী জীবনের সেই যন্ত্রণার চিত্র নাম না-জানা গীতিকারদের বিয়ের গীতের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে। লোকসংস্কৃতির গবেষক শক্তিনাথ ঝা-এর ‘মুসলমান সমাজের বিয়ের গীত’ নামে গ্রন্থে ২২৫টি গীত সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থের ২০২ নম্বর গীতে মুসলমান সমাজ স্বীকৃত একাধিক বিয়ের জ্বালা বর্ণনা করা হয়েছে। নাম না-জানা গীতিকারের সৃষ্টি, ‘‘সতীনের এমন জ্বালা সইতে পারি না। আগে জানলে সতীন আনতাম না।।... সতীনের এমন জ্বালা ওগো আল্লা সইতে পারি না।।’’’

নিরক্ষর মা সন্তানকে লেখাপড়া শেখাতে চায়। সেকালে শিক্ষার পুরো ব্যয়ভার সরকার বহন করত না। অনেকটা ব্যয়ভার অভিভাবকদের বইতে হত। সেই ছবিও উঠে এসেছে গীতে। ‘‘ফুল না তুলিতে ডাল না ভাঙিতে সেই বাঁকে আমার বাড়ি/ আমাদের ঐ সিরাজ লালকে স্কুলে পড়াব/ ছেলের স্লেট লাগে পেনসিল লাগে আরো কিছু লাগে দিব গো/ আমাদের ঐ মাইনুর লালকে স্কুলে পড়াব/ খাতা লাগে কলম লাগে আরো কিছু লাগে দিব গো/ আমাদের ঐ ফিরোজ লালকে স্কুলে পড়াব/ হাই বেঞ্চি লাগে লাই (লো) বেঞ্চি লাগে আরো কিছু লাগে দিব গো।।’’

পণপ্রথা আর মেয়ে বিদায়ের নাডি ছেঁড়া যন্ত্রণার কথা উঠে এসেছে বিয়ের গীতে। ‘‘এত না সোহাগের বেটি আমার জান কারে সুপিবো। ঐ যে যাকে দিয়েছি লাক লাক টাকা দান তারে সুপিবো। ঐ যে যাকে দিয়েছে আঁটি দান তারে সুপিবো’’ বহরমপুর শহর থেকে পান সুপারি কিনে গ্রামে ফেরার ছবি তুলে ধরা হয়েছে। উদয়অস্ত হাড়ভাঙা খাটুনির পরে বাড়ির মহিলাদের শ্রমের অমর্যাদার যন্ত্রণাও ফুটে উঠেছে। ফুটে উঠেছে আবহমান কালের শাশুড়ি-বধূর মনোমালিন্যের ছবিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Ritual Women Rights
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE