Advertisement
E-Paper

টানা বর্ষায় ঘোমটা পলিথিনে

কৃষ্ণনগরের আনন্দময়ী  তলা সংলগ্ন নতুনবাজার। পরিচিত নাম  পালপাড়া। অলিগলি জুড়ে ছড়ানো নামীদামি মৃৎশিল্পীদের কারখানা। বছরের এই সময়টা কারখানার ঘরে পালমশাইদের চূড়ান্ত ব্যস্ততা। তাই বাড়ির উঠোন থেকে এলাকার চিলতে ফাঁকা জমি— রঙিন প্লাস্টিকের অস্থায়ী ছাউনির নীচে সব বদলে যায় এক একটি শিল্পাগারে। তারই নীচে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটে মৃৎশিল্পীদের হাত। তৈরি হয় অসামান্য সব দুর্গা প্রতিমা।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:২০
বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। নিজস্ব চিত্র

বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। নিজস্ব চিত্র

একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত চিন্তার ভাঁজ বাড়াচ্ছে ওঁদের কপালে। ওঁরা মৃৎশিল্পী। দুর্গাপ্রতিমা গড়া এবং মাটি শুকোনার ক্ষেত্রে খলনায়ক হয়ে দাঁড়াচ্ছে বৃষ্টি। একের পর এক ঘূর্ণাবর্তের জেরে থমকে গিয়েছে কুমোর বাড়ির ব্যস্ততা। রথযাত্রার সময় থেকে বৃষ্টি চলছে। সূর্যদেবের মুখভার। তারই জেরে চিন্তিত পাল পাড়ার শিল্পীরা।

কৃষ্ণনগরের আনন্দময়ী তলা সংলগ্ন নতুনবাজার। পরিচিত নাম পালপাড়া। অলিগলি জুড়ে ছড়ানো নামীদামি মৃৎশিল্পীদের কারখানা। বছরের এই সময়টা কারখানার ঘরে পালমশাইদের চূড়ান্ত ব্যস্ততা। তাই বাড়ির উঠোন থেকে এলাকার চিলতে ফাঁকা জমি— রঙিন প্লাস্টিকের অস্থায়ী ছাউনির নীচে সব বদলে যায় এক একটি শিল্পাগারে। তারই নীচে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটে মৃৎশিল্পীদের হাত। তৈরি হয় অসামান্য সব দুর্গা প্রতিমা।

পালপাড়ায় এখন তুমুল ব্যস্ততা। সামনেই মনসা, গণেশ, বিশ্বকর্মা, দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী, জগদ্ধাত্রী, রাস— একের পর এক পুজো। প্রতিমা শিল্পীদের কাজের চাপের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী কার্তিক মাস পর্যন্ত নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগরের নতুনবাজার পাল পাড়া বা আনন্দময়ীতলা থেকে শুরু করে নবদ্বীপের নিমতলা বা করিমপুর পালপাড়ার।

অথচ, লাগাতার বৃষ্টির দাপটে কাজ বন্ধ করে, হাত গুটিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন মৃৎশিল্পী ও কারিগরের দল। এক-মেটে বা দো-মেটে প্রতিমা শুকোচ্ছে না। আর একটু এগিয়ে থাকা প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করে রং ধরাতে পারছেন না। আবার, খড়, বিচুলি, বাঁশ ভিজে যাওয়ায় নতুন করে প্রতিমার কাঠামো বাঁধতেও সমস্যায় হচ্ছে। এক দিকে ফুরিয়ে আসছে সময়। অথচ, কাজের যা গতি থাকা দরকার এ সময়ে, তা সম্ভব হচ্ছে না। নবদ্বীপের প্রবীণ মৃৎশিল্পী নাড়ু পাল বলেন— “বৃষ্টির দাপটে কাজ শুরু করতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। বড় প্রতিমা মণ্ডপেই গড়া হয়। কিন্তু বৃষ্টির জন্য মণ্ডপটাই তৈরি হয়নি এখনও।” আবহাওয়ার এমন দশা দেখে তিনি রওনা দিয়েছেন ত্রিপুরায়। সেখানে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের প্রতিমা গড়ার বরাত রয়েছে। সে কাজ এই ফাঁকে সেরে নিতে চাইছেন।

ঘূর্ণির প্রতিমা শিল্পী সুদীপ্ত পাল বলেন, “এমন একটানা বৃষ্টি এই সময়ে সচরাচর হতে দেখিনি। খুব অসুবিধায় পড়েছি।’’ এ বার আঠারোটি প্রতিমা গড়ছেন সুদীপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিমা প্লাস্টিক মুড়ে ঘরের মধ্যে রাখছি। কিন্তু বাঁশ, খড়, মাটির মতো উপকরণ তো বাইরে ভিজছে। তা দিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না।’’ প্রতি বছর এই সময় কৃষ্ণনগরের বেশ কিছু প্রতিমা বিদেশে যায়। সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও। শিল্পী সুবীর পাল বলেন, “এই স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় কাজের মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টানা রোদ না থাকলে মাটির কোনও কাজই ঠিক মতো হয় না।” দুর্গার কাজ নিয়ে নামী শিল্পীরা সরস্বতী পুজোর পর থেকেই ভাবনাচিন্তা শুরু করে দেন। নতুনবাজারের মৃৎশিল্পী সুরজিৎ ঘোষ বা আনন্দময়ী তলা পাল পাড়ার শিল্পী উজ্জ্বল পালের কথায়, আষাঢ়ের রথের পর দুর্গাপুজোর মধ্যে বড় জোর মাস তিনেক ফারাক থাকে। দুর্গা প্রতিমার সংখ্যা ও কাজের জটিলতা দুই-ই আগের চেয়ে বেড়েছে অনেকটাই।

‘‘এই অবস্থায় বৃষ্টি খামখেয়ালি আচরণ করলে আমরা যাই কোথায়?” বলছেন মৃৎশিল্পীরা।

Artist Polythene Durga Idol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy