বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দিবাকর (মাঝে)। নিজস্ব চিত্র
চার বছর পরে শেষতক বাড়ি ফিরে গেল ছেলেটি।
হাসছিল সে। তাঁর দুই দাদার চোখে জল, ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে কৃতজ্ঞতার একটা জুতসই ভাষা খুঁজছেন তাঁরা, পাচ্ছেন কি? ‘‘আপকো পরনাম সাহিব...’’ গলা ধরে আসছে মনোজের।
যাঁকে বলছেন, সেই মোসলেম মুন্সি হাসছেন বটে তবে একটা কান্না তাঁর গলাতেও দলা পাকিয়ে উঠছে। বলছেন, ‘‘ওরা ফিরে যাওয়ার সময়ে সব সময়ে হাসে। আর, আমার কান্না পেয়ে যায় জানেন...।’’
চাকরির ফাঁকে রাস্তায় ভবঘুরে খুঁজে বেড়ানোর নেশাতেই ‘পাগল’ মোসলেমের মাথায় আরও একটা পালক উঠল বুঝি। নাকাশিপাড়ার গলায়দড়ি এলাকায় স্বেচ্ছাসেবির হোমটা বড় কষ্ট করে টানছেন তিনি। তেমন কোনও সরকারি অনুদান নেই। নিজের আয়ে, কুড়িয়ে বাড়িয়ে ভবঘুরেদের ভর পেট থাকা-খাওয়ার নিশ্চিন্ত আবাস, তাঁর বাড়ি।
মঙ্গলবার দুপুরে সেখান থেকেই ঘরে পিরল দিবাকর মন্ডল। চার বছর আগে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানসিক স্থিতি হারানো যুবকটিকে হাত ধরে ঘরে তুলেছিলেন মোসলেম। অনেক কষ্টে জানতে পেরেছিলেন বাড়ি তাঁর, বিহারের কাটিহারের আমদাবাদ এলাকায়। এ দিন, দিবাকরের দুই দাদা মনোজ এবং বিভাসের হাতে ভাইকে তুলে দিয়ে মোসলেম বলছেন, ‘‘এটা সব চেয়ে তৃপ্তির জানেন। এই যে মানুষটা ঘরে ফিরছে।’’
দুই দাদাকে কাছে পেয়ে দিবাকরের হাসি মুখেও তখন কাঁপা ঠোঁট। মনোজ বলছেন, ‘‘ভাই, বছর সাতেক ধরে মানসিক রোগে ভুগছিল। চিকিৎসাও হয়েছিল। রোগগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। তবে শেষ করতে পারিনি। তার আগেই ও হারিয়ে গেল।’’
পুলিশ বলছে, বিহারের কাটিহার থেকে মালদহ হয়ে বছর চারেক আগে নাকাশিপাড়ার তেঁতুলবেড়িয়ায় এসে পড়েছিল দিবাকর। বাড়ি নিয়ে এসে মোসলেমই তাঁকে গড়ে পিঠে তুলছিলেন। চিকিৎসাও হয়েছে তাঁর। এখন ছেলেটি সুস্থ।
মোসলেম বলছেন, ‘‘প্রথম যখন এল কী সব আবদার, ঘোড়া না দেখালে খাবে না। এমন বায়না।’’ শেষ পর্যন্ত দিবাকরের জন্য হোমে একটা ঘোড়াও পুষেছিল মোসলেম। মনোজও বলছেন, “একদম ঠিক, বাড়িতেও গোড়া দেখানোর বায়না করত ও। আমাদের কী আর ঘোড়া কেনার মুরোদ আছে!’’
তবু তো ঘরে ফেরা!
মোসলেম বলছেন, ‘‘ক’টা বছর এখানে থেকে বাড়িই এক জন হয়ে গেছিল। তবু, ঘরে তো ফিরতেই হয় সবাইকে...।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy