Advertisement
E-Paper

টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ, ব্যাঙ্কমিত্রেরা নিষ্ক্রিয়, গ্রাহক হচ্ছে হয়রান

নদিয়া জেলায় এমন প্রচুর এলাকা আছে যেখানে ৮-৯ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই। ফলে সেখানে এই সমস্ত গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলিই ভরসা।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২১ ০৫:৩১
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

মাসের পর মাস বেতন তো দূরের কথা, কমিশনটুকুও না পেয়ে গ্রাহক পরিষেবা বন্ধ করে আন্দোলনে নামলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ব্যাঙ্কমিত্রেরা। তাঁদের অভিযোগ, ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও লাভ না হওয়ায় তাঁরা এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে জেলা জুড়ে এ ভাবে গ্রাহক পরিষেবা বন্ধ থাকায় হয়রান হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকেরা।

নদিয়া জেলায় এমন প্রচুর এলাকা আছে যেখানে ৮-৯ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই। ফলে সেখানে এই সমস্ত গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলিই ভরসা। তার উপরে অতিমারির কারণে ব্যাঙ্কে ভিড় কমিয়ে এই সব গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলি মারফত টাকা-পয়সা লেনদেন করতে উৎসাহ দিচ্ছেন সমস্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষই। এখন গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন হাজার-হাজার গ্রাহক হয়রান হচ্ছেন। টাকা পেতে তাঁদের ছুটতে হচ্ছে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে ব্যাঙ্কের শাখায়। তাতে এক দিকে যাতায়াতের জন্য মোটা টাকা খরচ হচ্ছে, তেমনই থাকছে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও।

হাঁসখালি থানার ভৈরবচন্দ্রপুরে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে আছে। সেটি রবিবার থেকে বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের ছুটতে হচ্ছে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে হাঁসখালিতে। কারণ এর থেকে কাছে ওই ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই। ভৈরবচন্দ্রপুরের বাসিন্দা রেবতী বিশ্বাস বলছেন, “আমি চাষের কাজ করি। গ্রামের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে আমার অ্যাকাউন্ট আছে। এত দিন সেখান থেকেই প্রয়োজন মত টাকা লেনদেন করেছি। সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রচন্ড সমস্যা হচ্ছে।” তিনি জানান, হঠাৎই তাঁর বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন পড়েছিল। গ্রামের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র বন্ধ থাকায় তাঁকে হাঁসখালি প্রর্যন্ত ছুটতে হয়।

তাঁর আক্ষেপ, “করোনা পরিস্থিতিতে এই যাতায়াত শুধু ঝুঁকির নয়, ব্যয়বহুলও বটে। কারণ এখন সেভাবে যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও অনেক বেশি ভাড়া চাইছে।”

ভৈরবচন্দ্রপুরের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের ব্যাঙ্কমিত্র দেবাশিস মণ্ডল বলছেন, “জানুয়ারি থেকে আমরা বেতন ও কমিশন কিছুই পাচ্ছি না। সংসার চালানো যাচ্ছে না। ব্যাঙ্ক কিছুই করছে না। তাই এই পথ নিতে বাধ্য হয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “আমার প্রায় চার হাজার গ্রাহক আছে। মাসে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়। সেই টাকার উপর কোনও কমিশন পাচ্ছি না। মাঝে কিছু টাকা দিয়েছিল যেটা খুবই সামান্য।”

নদিয়া জেলায় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ১৯৮টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র আছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার করে গ্রাহক আছে। গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের ব্যাঙ্কমিত্রদের সংগঠন বেঙ্গল ‘ব্যাঙ্ক বিজ়নেস করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, প্রথমে চুক্তি হয়েছিল যে ব্যাঙ্ক তাঁদের এক শতাংশ করে কমিশন ও পাঁচ হাজার টাকা করে বেতন দেবে। কিন্তু কয়েক দিন পর থেকে সেই চুক্তি মানা হয়নি। ০.৫ শতাংশ কমিশন ও তিন হাজার টাকা করে বেতন দিতে শুরু করে। কয়েক মাস পর সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাস কয়েক আগে থেকে ০.২৪ শতাংশ হারে কমিশন ও মাত্র দেড় হাজার টাকা করে বেতন দিতে থাকে। জানুয়ারি মাস থেকে সেটাও বন্ধ।

তিনি বলেন, “এর ফলে হাজার হাজার ব্যাঙ্কমিত্র পরিবার নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দিনের পর দিন আলোচনা করেও কোনও লাভ হয়নি। আমরা তাই ৩০ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত ওই সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সমস্ত গ্রাহক পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

সোমবার ব্যাঙ্কমিত্রেরা ওই ব্যাঙ্কের একাধক শাখার সামনে বিক্ষোভ দেখান। সংগঠনের কর্তাদের দাবি, করোনা পরিস্থতির কারণে তাঁরা কোথাও বেশি জামায়েত করেননি। বেশিক্ষণ ধরে বিক্ষোভও দেখাননি। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সার্কেল হেড বিরাজমান কেরকেট্টা বলেন, “ব্যাঙ্কমিত্রেরা একটি সংস্থার মাধ্যমে কাজ করেন। আমরা সেই সংস্থাকে যাবতীয় টাকা দিয়ে দিয়েছি। তারে পরেও কেন এমনটা হচ্ছে বলতে পারব না। গোটা বিষয়টি আমরা হেড অফিসকে জানিয়ে দিয়েছি।”

নদিয়া লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তপু দত্ত বলেন, “বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”

bank Nadia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy