Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অন্যদের সাজিয়ে সুন্দর জীবনের খোঁজে তাপসীরা

সৌন্দর্য থেকেই শক্তি খুঁজে পেয়েছেন তাপসী মণ্ডল। রানাঘাট স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ি। স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। সংসার চালাতে স্টেশনের কাছে মুড়ি-চপের দোকান খুলেছিলেন। বছরখানেক আগে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। পশ্চিমবঙ্গ তপশিলি জাতি ও আদিবাসী উন্নয়ন নিগমের আর্থিক সহায়তায় রানাঘাট পুরসভা আয়োজিত একটি ‘বিউটিশিয়ান কোর্স’ করেন তাপসী।

বিউটি পার্লারে কাজে ব্যস্ত মেয়েরা। —নিজস্ব চিত্র।

বিউটি পার্লারে কাজে ব্যস্ত মেয়েরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৮
Share: Save:

সৌন্দর্য থেকেই শক্তি খুঁজে পেয়েছেন তাপসী মণ্ডল। রানাঘাট স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ি। স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। সংসার চালাতে স্টেশনের কাছে মুড়ি-চপের দোকান খুলেছিলেন। বছরখানেক আগে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। পশ্চিমবঙ্গ তপশিলি জাতি ও আদিবাসী উন্নয়ন নিগমের আর্থিক সহায়তায় রানাঘাট পুরসভা আয়োজিত একটি ‘বিউটিশিয়ান কোর্স’ করেন তাপসী। তারপর নিগমের কাছ থেকেই ঋণ নিয়ে খোলেন নিজের পার্লার। ‘‘এখন আশপাশের এলাকার সকলেই আমার পার্লারের নাম এক ডাকে জানে।’’ সব খরচ মিটিয়ে মাসে ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করেন তাপসী। কেবল নিজেই রোজগার করছেন, তা নয়। নিজের পার্লারে কাজ দিয়েছেন আরও ছ’টি মেয়েকে।

স্বল্পবিত্ত পরিবারের মে়য়েদের জন্য নিখরচায় বিউটি পার্লারের এই প্রশিক্ষণ গোটা রাজ্যজু়ড়ে প্রায় ৫০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে দিচ্ছে নিগম। নিগমের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘সৌন্দর্যচর্চা এখন অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে। পিছিয়ে-পড়া শ্রেণির মহিলাদের বিউটি পার্লারের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চায় নিগম। তাই এই প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত।’’

নিগমের অর্থানুকুল্যে তিন মাসের এই বিউটি পার্লার কোর্স চালু হয়েছে নদিয়া জেলাতেও। জেলার চারটি মহকুমার ছ’টি কেন্দ্রে বছরভর ১৮-৪০ বছর অবধি বয়সের মহিলারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। নিগমের নদিয়া জেলার ম্যানেজার অসীমকুমার বালা বলেন, ‘‘২০১৩ সালের শেষের দিকে হরিণঘাটায় ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে বিউটি পার্লারের কোর্স চালু করা হয়। তারপর থেকে আমরা বিপুল সাড়া পেয়েছি। ধীরে ধীরে জেলার সব মহকুমা এলাকাতেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। নিগমের অর্থানুকুল্যে একটি নামী অসরকারি সংস্থা এই কোর্স করাচ্ছে।’’

কেন্দ্রগুলি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই জীবনের বাঁচার নতুন অর্থ খুজে পাচ্ছেন। নিগমের কল্যাণীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এখন ১৫৭ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কল্যাণী পুরসভার বাসিন্দা বছর চব্বিশের মালতী মুর্মু কল্যাণী মহাবিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দাদা বেকার। আর্থিক অনটন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মালতী মাস খানেক থেকে বিউটি পার্লারের কোর্স করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে যত্ন করে কোর্সটা করানো হচ্ছে। কোর্স শেষে নিজেই একটা পার্লার খুলব। নিজে কিছু করার তাগিদ থেকেই এই কোর্স করার কথা মনে আসে।’’ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেছেন জয়িতা মণ্ডল। তেমন কোনও কাজ হাতে আসেনি। মাস তিনেক হল রানাঘাটে নিগমের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তিনি বিউটি পার্লারের কোর্স করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট থেকেই সাজতে ও সাজাতে ভালবাসতাম। শেষমেশ পরিচিত একজনের কাছ থেকে এই কোর্স সম্পর্কে জেনে ভর্তি হলাম। এ বার নিগমের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে নিজেই একটি পার্লার খুলব।’’

অসীমবাবু জানাচ্ছেন, অনেকেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর নিজেই পার্লার খোলার জন্য ভর্তুকিতে ঋণ পাওয়ার জন্য আবেদন করছেন নিগমের কাছে। ‘‘ইতিমধ্যে ছ’জনকে আমরা ঋণ দিতে পেরেছি,’’ বলেন তিনি। নিজে পার্লার খোলার ঝুঁকি না নিতে চাইলেও রোজগারের অভাব হবে না প্রশিক্ষিত মেয়েদের। বিউটি পার্লারের বাজার যে ভাল তা মানছেন এই পেশার সঙ্গে জড়িত সকলেই।

কৃষ্ণনগরের এক নাম করা বিউটি পার্লারের মালিক বলছেন, ‘‘আমরা অনেক সময় ভাল কাজ জানা মেয়ে খুঁজে পাই না। নিগমের কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেয়েদের কাজ পেতে কোনও অসুবিধা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE