খুড়ে খুড়ে হারিয়েছে রাস্তা। বেলডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র
গার্হস্থ্য মানুষ আর গৃহপালিত পশু— সে এক আশ্চর্য সহবস্থান!
ফি মঙ্গলবার অন্তত এ ছবিতেই অভ্যস্থ বেলডাঙা। ওঁরা অফিস–কাছারি, স্কুল-কলেজের রাস্তা ধরেন হাতে সময় রেখে। ওঁদের বাডিতে মঙ্গলবার, কুটুম বাড়ন্ত।
কারণ, ‘ওরা’ সে দিন, হাটের ছোট্ট মাঠটা ছাপিয়ে, দাপিয়ে বেড়ায় রাস্তা জুড়ে। কখনও দলবদ্ধ ভাবে কখনও বা নিতান্তই একা-একা খদ্দেরের খোঁজে, মুখে নাল, চার পায়ে অনর্গল হেঁটে চলেছে বেলডাঙা ফুঁড়ে যাওয়া জাতীয় সড়ক জুড়ে।
বেলডাঙার পশু হাটের দাপটে মঙ্গলবার তাই দিনভর মুর্শিদাবাদের ছোট্ট শহরটা কেমন এক গতি-হারা স্তব্ধ, অথচ শব্দময় হয়ে থাকে।
হাট বসে সাত সকালে। দূরের প্রান্তিক গ্রাম থেকে কালো-ধল গরু-মাষ-ঘোড়া এমনকী ছাগল-ভেড়ার পাল নিয়ে গন্ধ আর শব্দে সরগরম হয়ে থাকে বড়ুয়া মোড়, মহ্যমপুর-সহ জাতীয় সড়কটাই।
যার ফলে রোগীকে ডাক্তারের চেম্বারে না গিয়ে ফিরে যেতে হয় বাড়িতে। স্কুলে না গিয়ে ভ্যানরিকশার ‘পুল কার’ ফিরিয়ে আনে গলির মোড়ে। আর অফিসে পৌঁছতে সক্কলেরই লেট।
হাটটা পশুর হলেও, তার লেজ ধরে হাটের আনাচ কানাচে সস্তার পোশাক থেকে সব্জি, টিপ-চুড়ি-ফিতে থেকে দাদ-হাজা-চুলকুনির মলম— মেলে সবই।
৩৬ বিঘা এলাকার এই হাট সরকারি হিসাবে বেলডাঙা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে পরিসর কি বাঁধা থাকে? ফলে কালে কালে তা নেমে এসেছে বেলডাঙা বড়ুয়া এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কেও।
সে সড়ক ভেদ করে চলাচল করে সাধ্য কার?
মির্জাপুরের ইব্রাহিম শেখ নাতিকে নিত্য স্কুলে দিতে যান ওই পথে। বলছেন, ‘‘গত মঙ্গলবার সকাল ছ’টায় বেরিয়ে ছিলাম। ঘণ্টা দেড়েক দাঁড়িয়েও গরু-মোষ ঠেলে এগোতে পারিনি। ফিরে এলাম।’’
আর, দাদপুরের রত্না মণ্ডলের কথায়, ‘‘মায়ের জন্য ওষুধ কিনে থানার সামনে দিয়ে পিরছিলাম। একটা মোষ এমন ঢুসলো যে আমাকেই ভর্তি হতে হল হাসপাতালে।’’
আর বাস-ট্রেন ধরে যাঁরা শহরের বাইরে যেতে চান— তাঁদের দুর্গতির কথা না বলাই
কী বলছেন হাটিরেরা? আনারুল শেখ, পতু শেখের দাবি— ‘‘দশকের পর দশক ধরে হাট চলছে। আর এখন হঠাৎ অসুবিধা শুরু হল!’’ হাট কমিটির পক্ষে নাজমে আলম আরও সপাট— ‘‘হাট তো তার জায়গাতেই বসে। বাইরের রাস্তায় কী হচ্ছে, কারা বসছে বলতে পারব না।’’
তিনি না বলতে পারলেও, স্থানীয় বিধায়ক কংগ্রেসের সফিউজ্জুমান বলছেন, ‘‘এটা ঠিক হাটবারে বেলডাঙাটায় জাতীয় সড়ক একেবারে অগম্য হয়ে ওঠে।’’ তাঁর আশা রাস্তা ফোর-লেন হয়ে গেলে হাট আর রাস্তায় উঠবে না। বলছেন, ‘‘দ্রুত গাড়ি চলাচল করলে হাটুরেরা নিজেদের জায়গাতেই বসবেন।’’ রাতারাতি তাঁরা এমন ‘নিয়মের দাসম হয়ে পড়বেন বলে অবশ্য মনে করছে না জেলা প্রশাসন।
বেলডাঙার মহকুমাশাসক দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেই তা স্পষ্ট, ‘‘দেখি এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত আর ন্যাশনাল হাই-ওয়ে অথরিটির সঙ্গে বৈঠক করব।’’ তবে কতটা সুরাহা হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও ধারনা তিনি দিতে পারেননি।
দেবেনই বা কী করে, স্জ়থানীয় বাসিন্দা নাসের হুসেন বলছেন, ‘‘সদিচ্ছাটা যে হাটুরেদেরই নেই। না হলে এমন রাস্তা দখল করে হাট বসে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy