বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় এ রকম বাইক-বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। ফাইল চিত্র।
চায়ের দোকান থেকে সটান গাঁয়ের বাড়িতে গিয়েছিল ফোনটা— ‘‘হ্যালো দাদা, ওরা যাচ্ছে। বাড়িতে থেকো না। পালাও!’’
এক ঝাঁক মোটরবাইক যেতে দেখে রাস্তার ধারে দোকানে বসা বিজেপি সমর্থক ব্যবসায়ীর ওই ফোন। যা পেয়ে দুদ্দাড় পালিয়ে বাঁচেন প্রার্থী।
রানাঘাট ২ ব্লকের দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। গত কয়েক দিন ধরে সেখানে বাইক-বাহিনী দাপাচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের পাঠানো ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী তারা। কেউ এলাকার নয়। পুর এলাকায় ভোট না থাকায় আশপাশের শহরাঞ্চল থেকে পাঠানো হচ্ছে এদের।
শান্তিপুর শহর থেকে যেমন জনা কুড়ি যুবকের একটি দল এসে ডেরা গেড়েছে দেবগ্রামে। সেখান থেকেই তারা আশপাশের পঞ্চায়েত এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ক’দিন আগেই মাঝেরগ্রামে কংগ্রেসের এক মহিলা প্রার্থীর বাড়িতে হামলা হয়। তিন-চার দিন আগে ওই মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পার্শ্বনাথপুর গ্রামে সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালায় বাইক-বাহিনী। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বহিরাগত আগন্তুকেরা তাঁর বাড়ির সামনে বোমাবাজি করে। প্রতিবাদে পরের দিন বিরোধীরা একজোট হয়ে মিছিল করেন।
কল্যাণী, রানাঘাট ১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় এ রকম বাইক-বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। বিরোধীদের ভয় দেখানো বা প্রচারে বাধা দেওয়া তো আছেই। বিরোধী ভোটারেরা যাতে বুথে যেতে ভয় পান, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করাও তাদের উদ্দেশ্য। দেবগ্রামে ডেরা গাড়া বাহিনীর এক জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, ‘‘এখন শহরে ভোট না থাকায় আমরা এখানে সময় দিচ্ছি। ভোটপর্ব পুোরপুরি না মেটা পর্যন্ত এই এলাকাতেই থাকব।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, সাধারণত সন্ধে থেকে রাত ৮টা-১০টা পর্যন্ত এই বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্তত সাত-আটটি মোটরবাইকে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে থাকছে এলাকার কিছু কর্মীও, যাদের কাজ বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও সংগঠকদের বাড়িতে চিনিয়ে দেওয়া। বিজেপির ৪১ নম্বর জেলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিতোষ বসুর বাড়িতেও অন্তত দু’বার হানা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে না পেয়ে বাড়ির সামনে বোমাবাজি করা হয়েছে। অমিতোষ বলেন, “শান্তিপুর থেকে গুন্ডাবাহিনী এসেছে। আমাদের প্রার্থীদের বাড়ি-বাড়ি হানা দিচ্ছে।’’
নদিয়া জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অখিল মজুমদারও বলেন, “অজ্ঞাতপরিচয় যুবকেরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। আমাদের যে দু’চার জন ভোটের ময়দানে টিকে রয়েছে, তাদের প্রচার আটকাতে ভয় দেখানো হচ্ছে।” তৃণমূল সাংসদ তথা রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায় আবীররঞ্জন বিশ্বাস অবশ্য দাবি করেন, “আমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চাইছি না। বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। এখন বাইরে থেকে মস্তান নিয়ে এসে ভয় দেখানোর অপপ্রচার চলছে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-ও অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের নির্দেশেই দুষ্কৃতীদের বাইক-বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। লক্ষ্য হল, বিরোধীরা যাতে প্রচারে যেতে না পারে, ভোটারেরা যাতে বুথে যেতে ভয় পান।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য রুটিনমাফিক দাবি করেন, এ সব নিছকই মিথ্যে অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের সঙ্গে মানুষ নেই। তাই এই সব গালগল্প বলে সহানুভূতি কুড়োতে চাইছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy