বিরোধীদের মনোনয়ন জমা রোখার যাবতীয় চেষ্টা চলছে। কিন্তু নিজের ঘরই সামলাতে পারছে না তৃণমূল।
শুক্রবার দুপুর থেকে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধল শমসেরগঞ্জে। বিধায়ক আমিরুল ইসলাম ও জেলা পরিষদ সদস্য আনারুল ইসলাম ওরফে বিপ্লবের গোষ্ঠীর বোমাবাজিতে থমকে যায় ধুলিয়ান শহরের প্রধান রাস্তা। ফরাক্কা ও সুতি থানা থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এত দিন বিধায়কের অনুগতরাই প্রাধান্য পেয়ে এসেছেন। আনারুল বাদে তার গোষ্ঠীর আর কেউ মনোনয়ন পাননি। সেই ক্ষোভে বহু আসনেই অনুগতদের নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে শুরু করেছেন আনারুল। এ দিন ব্লক অফিসে আনারুলের লোকজন নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে এলে সংঘর্ষ বাধে। পরে একটি বিড়ি কারখানাতেও হামলা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে ধুলিয়ান ডাকবাংলো লাগোয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। ভাঙচুর হয়েছে একাধিক দোকান ও বাড়ি। আহত অন্তত চার জন।
কৃষ্ণনগরে আবার ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি। কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের বিধানসভা এলাকায় কৃষ্ণনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে টানা দু’বারের সভাপতি শিবুনাথ ঘোষ। এ বার সভাপতি ও সহ-সভাপতির পদ সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ার তিনি জেলা পরিষদের আসন দাবি করেন। কিন্তু দল তাতে আমল না দিয়ে ২২ নম্বর আসনে প্রার্থী করে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কৃষ্ণনগর ১ (দক্ষিণ) ব্লক সভাপতি কার্তিক ঘোষকে। শুক্রবার তিনি কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে দেখেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন শিবুনাথ।
একই কেন্দ্রে প্রার্থী হতে চেয়ে একাধিক মনোনয়ন জমা পড়া নিয়ে জেরবার বেলডাঙা ১ ব্লক তৃণমূলও। ব্লক তৃণমূল সভাপতি বনতোষ ঘোষ বলেন, ‘‘কাপাসডাঙা, মির্জাপুর, মাড্ডার মতো কিছু পঞ্চায়েতে প্রার্থী নিয়ে সমস্যা আছে। কাকে প্রার্থী করা হবে, ব্লক নির্বাচনী মনোনয়ন কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।’’
বেলডাঙা ১ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় রয়েছে ৩৯টি আসন। গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৩। তার মধ্যে মাড্ডায় দলুয়া গ্রামের ১ নম্বর সংসদে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দু’জন— গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান সদস্য গোলাম মুর্তোজার স্ত্রী সাকিনা বিবি। অন্য জন দু’টি খুনের মামলায় অভিযুক্ত ছোটন শেখের স্ত্রী আফরোজা বিবি। দলুয়ার পাশেই বেনাদহ গ্রাম। ওই দু’টি গ্রামের ছ’টি গ্রাম সংসদ নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির ১৯ নম্বর সংসদ। সেটির বর্তমান সদস্য মনসুর আলি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আবার বেনাদহের কয়লা কারবারি আব্দুস সামাদ মল্লিকও ওই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এ দিনই তেহট্ট ২ ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ দল ছে়ড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিধায়ক ও জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাচ্ছিল্যের অভিযোগ এনেছেন তিনি। নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘উনি তৃণমূল করতেন কি না, সেটাই সন্দেহ। উনি বিজেপিতে যাওয়ায় তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’