Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

যাক, অন্তত অর্ডার দিয়ে সুচ-সুতো আনতে হবে না

ডোমকলে ভোট আর সান্ধ্য আড্ডা! পদ্মার ভিজে হাওয়া গায়ে মেখে শেষ কবে এমন নিরুত্তাপ নির্বাচন দেখেছে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা জনপদটি, মনেই করতে পারছেন তৈমুর শেখ।

জমিয়ে-আড্ডা: খোশমেজাজে ডোমকল। নিজস্ব চিত্র

জমিয়ে-আড্ডা: খোশমেজাজে ডোমকল। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০১:২৭
Share: Save:

হ্যাজাকের আলোয় চায়ের দোকানটা থই-থই করছে। জনা কুড়ি বিভিন্ন বয়স, চা-লেড়ো বিস্কুটে যা নিয়ে ছেঁড়াখোঁড়া করছেন তার সাবেক নাম— আইপিএল।

ডোমকলে ভোট আর সান্ধ্য আড্ডা! পদ্মার ভিজে হাওয়া গায়ে মেখে শেষ কবে এমন নিরুত্তাপ নির্বাচন দেখেছে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা জনপদটি, মনেই করতে পারছেন তৈমুর শেখ। বয়স প্রায় আশি। বিড় বিড় করছেন, ‘‘রক্ত ছাড়া কোনও বার নির্বাচন দেখিনি। আর সেই রক্তাক্ত হওয়ার আশঙ্কায় ভোটের আগেই নিঝুম হয়ে যেত পাড়া।’’ এ বার ভোটহীন ডোমকল তাই নিরুত্তাপ, আইপিএল-এ ব্যাস্ত।

ভোট দেখছে না নদিয়ার হরিণঘাটাও। অলি-গলি, চায়ের দোকান, রাস্তার ধারে হট্টগোলের মাচায় সেখানে আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে ভাগাড়ের মাংস!

না-ভোটের আবহে স্বস্তি এবং অস্বস্তি মিলিয়ে অন্যরকম হয়ে আছে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের এই
প্রান্তিক জায়গাগুলি।

ডোমকলের এক পুলিশ কর্তা বলছেন, ‘‘গণতন্ত্র চুলোয় যাক। মানুষ খুনের থেকে এমন ভোট না হওয়ায় ভাল।’’ তা হলে এ বার আপনার শান্তি? মৃদু হাসছেন তিনি, ‘‘কে জানে, শ্মশানের শান্তি কি না!’’

গত পাঁচটি নির্বাচনে ডোমকলে মৃত্যুর খতিয়ান সরকারি ভাবেই ২৩, যা শুনে পুরনো এক পুলিশ কর্তা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, ‘‘বেসরকারি খতিয়ানটা জানেন? চল্লিশ ছাড়িয়ে যাবে!’’ নির্বাচনের সকাল ছাড়াও বোমা বাঁধতে গিয়ে কিংবা রাজনৈতিক হানাহানির জেরে ডোমকলে মৃত্যুমিছিল চলেছে অবিরাম। এ বারও তার খামতি নেই।

খুশিতে ডগমগ হয়ে এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘এ বার ডোমকলে ভোট না হওয়ায় সব থেকে খুশি হয়েছে আমার মা। বুধবার সকালে মা কাঁপা-কাঁপা গলায় ফোন করে জানতে চেয়েছে ‘খোকা ই-মনোনয়নে তোর ওখানে আবার ভোট হবে নাকি?’ আমি না বলতেই মা একটা বড় নিশ্বাস ফেলল।’’ কেবল ওই পুলিশকর্তা নয়, এ দিন সকালে এক আমলার বৌ ডোমকলে ভোট না হওয়ার কথা শুনে এতটাই খুশি হয়েছেন যে, ভোটের সময়ে এ বার ডোমকলে এসে দিন কয়েক ছুটি কাটানোর বায়না ধরেছেন।

গুনগুন করে একটি ফকিরি গান ধরে মহকুমার এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘কেবল পরিবার নয়, নিজেকেও অনেক হালকা মনে হচ্ছে। আর যা-ই হোক, ভোটকে ঘিরে মানুষের মৃত্যু হবে না এটাই বড় প্রাপ্তি।’’ আর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘আরে এ বার আর অর্ডার দিয়ে সুচ-সুতো ব্যান্ডেজ আনাতে হবে না এটাই বড় পাওনা।’’

স্বস্তিটা হরিণঘাটাতেও ছড়িয়েছে। স্থানীয় এক আমলা বলছেন, ‘‘গত বার থেকে হরিণঘাটাও ডোমকলের সঙ্গে এক বন্ধনীতে পড়তে শুরু করেছে। বাড়ির লোক তাই বার বার বদলি নিতে বলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE