রঙে-রঙে। আবীর খেলা বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
বহু কষ্টে গা থেকে রং তুলতে না তুলতে ফের রঙের পরত।
শহরটা যে বহরমপুর। দু’দিন ধরে রঙের হুল্লোড় যে এ শহরের চেনা ছবি। সে উৎসবে বাড়তি রং ধরিয়েছে পড়ে পাওয়া যমজ ছুটি।
গত পরশু ছিল একে রবিবার, তায় দোল। সোমবার আবার উপরি পাওনা। ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাই জো়ড়া ছুটিতে দু’দিন ধরে উৎসব-অনুষ্ঠানে মজল জেলা। তবে দু’দিন ব্যপী দোল অবশ্য অচেনা নয় মুর্শিদাবাদে। বরং বলা যায় রাজ্য সোমবার দোলের ছুটি ঘোষণা করায়, হোলির পুরনো মৌতাত নতুন করে ফিরে এসেছে।
এক সময় রাজার সঙ্গে জমিদারের বিবাদের জেরে এ জেলায় দু’দিনের দোল শুরু হয়েছিল। সে প্রায় একশো বছর আগের কথা। ওই সময় বিবাদমান দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেও বহরমপুর শহরের বিশিষ্টজনেরা সুরাহা করতে পারেননি। অবশেষে প্রথম দিনের দোলে কেন্দ্রীয় ছুটি ও দ্বিতীয় দিনে স্থানীয় নিয়ন্ত্রিত ছুটি ঘোষণা করে দু’দিনের দোলে সরকারি মান্যতা দেওয়া হয়। ২০০৩ সালে বাম সরকার ছুটির দিন সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে মুর্শিদাবাদ জেলায় দোলের দ্বিতীয় দিনে স্থানীয় নিয়ন্ত্রিত ছুটি বাতিল করা হয়। তাতে অবশ্য দ্বিতীয় দিনের হোলির জৌলুস কমেনি। ট্রাডিশনও থেমে থাকেনি। তাই রাজ্য সরকার এ বছর সোমবার ছুটি ঘোষণা করায় উৎসবের জৌলুস আরও বেড়েছে।
বহরমপুর শহরের প্রবীণরা জানাচ্ছেন, উত্তর-পূর্ব প্রান্তে ছিল রাজাদের বাড়ি। আর শহরের নতুনবাজার এলাকায় ছিল জমিদার পুলিনবিহারী সেন ও তাঁর জ্ঞাতিগোষ্ঠীর বাড়ি। আগে এক দিনই দোল হতো। রাজাদের সঙ্গে বিবাদের পরে সেনবাড়ির জমিদাররা দু’দিনের দোল চালু করেন। সেই শুরু। রাজাদের পক্ষ নেন সৈয়দাবাদের জমিদার শশীভূষণ চৌধুরী। সেনবাডির পক্ষ নেন বহরমপুরের ভট্টচার্য জমিদাররা।
আর এক প্রবীণ বলেন, ‘‘দু’দিনের দোল নিয়ে রাজা-জমিদারের লড়াই আদালতের এজলাস পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এক বার তো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার দিন পড়েছিল দ্বিতীয় দিনের দোলে।’’ ফলে পরীক্ষার নির্ঘণ্ট ঢেলে সাজতে হয়। দ্বিতীয় দোলের দিনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়। পুরনো দিনের জমিদারের দোল-সংস্কৃতির পরিচয় মেলে বহরমপুর শহরের বিশিষ্ট আইনজীবী অশীতির স্বাধীন সান্যালের কৈশরের স্মৃতিচারণা থেকে। তখন সেন বংশের বংশধর হরি সেন মখমলের ধুতি পাঞ্জাবি পরে পারিষদদের সঙ্গে নিয়ে ঘোড়ায় টানা বিশেষ টমটমে চেপে রঙ খেলতে বের হতেন। ঘণ্টা খানেক পর পোশাক থেকে রং উধাও। থাকত কেবল সুগন্ধ। আজ আর সেই জমিদারও নেই। নেই ‘ভ্যানিসিং’ রংও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy