রোহান (ইনসেটে)। মৃতের মা ও দিদি। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
রাতের নমাজ সবে শেষ হয়েছে। একে-একে মসজিদের বাইরে বেরিয়ে আসছেন সকলে। আচমকা কিশোর কণ্ঠের আর্তনাদে সকলে চমকে ওঠেন। চোখের সামনে মাটিতে ছিটকে পড়েছে সে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে রোহান নামে ওই কিশোর। সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের ইমাম ছুটে গিয়ে মেন সুইচ অফ করেন। সকলে ছুটে যান মাটিতে পড়ে থাকা কিশোরের কাছে। বুকে পিঠে মালিশ করতে-করতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মহেশগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন, হাসপাতালে আসার আগেই মারা গিয়েছে রোহান মালিতা (১২)। ইদুজ্জোহার আগের রাতে এমন দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ কোতোয়ালি থানার গঙ্গাবাস গ্রাম। সমস্ত উৎসব থেমে গিয়েছে। নিভে গিয়েছে সব রোশনাই। রয়ে গিয়েছে শুধু কান্না আর হাহাকার।
এমন ইদ আগে কখনও আসেনি গ্রামে, আর যেন কখনও না-আসে সেই দুয়া করছেন গ্রামবাসীরা। ইদের আগের রাতে গ্রামের ফুটফুটে কিশোরের প্রাণ চলে গিয়েছে দুর্ঘটনায়। সোমবার সকালে নমাজ পড়ার পরে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, এই শোকের পরিবেশে গ্রামে কোরবানি হবে না। কোরবানি হবে আজ মঙ্গলবার। গ্রামের মসজিদের ইমাম মুস্তাকিম মোল্লা বলছেন, “গ্রামের কারও উৎসব করার মতো মন নেই। তাই কুরবানি এক দিন পরে হবে।” গঙ্গাবাস গ্রাম আলোয়, মাইকে সেজে উঠছেল। সোমবার তার চিহ্ন নেই। জ্বলছে না মসজিদের আলো। রবিবার রাতে মসজিদের এই আলোয় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে আমঘাটা হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রোহান মালিতা-র।
ইমান মুস্তাকিম মোল্লা বলছেন, ‘‘আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে আসার কথা ছিল রোহানের। আমি বাইক বের করতে যাব। সেই সময় দেখি ছেলেটা চিৎকার করে মাটিতে ছিটকে পড়ল। আমার কাছে আরবি পড়ত। কিছুতেই যেন মানতে পারছি না ওর মৃত্যু।”
রোহানের বাবা আব্দুল রশিদ মালিতার বর্ধমানে একটা ছোট লন্ড্রির দোকান রয়েছে। ইদে বাড়ি ফেরেছিলেন। ছেলের মৃতদেহটা আঁকড়ে ইদের সকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন। খাটে পরিপাটি করে রাখা রোহানের ইদের নতুন জামা। সে দিকে তাকিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন মা নর্গিস বিবি। উৎসবের দিন শোকের আঁধার গিলে খাচ্ছে গঙ্গাবাস গ্রামকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy