Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
haringhata

হুইলচেয়ারে স্বপ্ন-উড়ান ছন্দকুমারের

তবে চলনশক্তি চলে গেলেও মনের জোরে কখনও পিছিয়ে রাখা যায়নি ছন্দকুমারকে। হুইলচেয়ারে বসেই স্কুলে যাতায়াত শুরু করে সে।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

মনিরুল শেখ
হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ ০২:০৭
Share: Save:

ছোটবেলায় সে আর পাঁচ জন সুস্থ-স্বাভাবিক শিশুর মতোই ছিল। কিন্তু ছয় বছর বয়স থেকে হঠাৎ শরীরের নীচের অংশের শক্তি হারাতে শুরু করে শিশুটি। ধীরে ধীরে কোমরের নীচ থেকে পা পর্যন্ত অসাড় হয়ে যায় তার। আর তার পর থেকেই হুইলচেয়ার সঙ্গী হরিণঘাটার মহাদেবপুরের ছন্দকুমার দেবনাথের।
তবে চলনশক্তি চলে গেলেও মনের জোরে কখনও পিছিয়ে রাখা যায়নি ছন্দকুমারকে। হুইলচেয়ারে বসেই স্কুলে যাতায়াত শুরু করে সে। বিশ্বভ্রমণের দরজা খুলে যায় বইয়ের মধ্যে দিয়ে। তার মা, রীতা দেবনাথ সংসারের অভাবের তাড়নায় অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তার মধ্যেও সময় করে রোজ বেলা ১০টা নাগাদ বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরের স্কুলে ছেলেকে দিয়ে আসতেন। ফের বিকেলে ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন মা। এমন করেই পড়াশোনা চলছিল হুইলচেয়ার-বন্দি ছন্দকুমারের। সেই ছন্দকুমার এই বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বেশ ভাল ফল করেছে। ৫২৫ নম্বর পেয়ে নগরউখরা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াটি। সে বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৮৩, অঙ্কে ৭২, জীবনবিজ্ঞানে ৬৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৫৬, ভূগোলে ৯২ ও ইতিহাসে ৬৮ পেয়েছে।
ছন্দকুমারের বাবা জয়দেব আনাজ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো এলাকার কাজহারা সকলেই আনাজ বেচেন। ফলে, দৈনিক ১০০ টাকা লাভ করতেই ঘাম ছুটে যায়। পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজ করতে হয়। এ দিকে, ছেলের চিকিৎসার জন্য কল্যাণী, কলকাতা, দক্ষিণ ভারত ঘুরে ঘুরে সংসারে সঞ্চয় বলে আর কিছুই নেই। উল্টে বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ নিতে হয়েছে।’’
অন্য দিকে, ছন্দকুমারের মা রীতা বলছেন, ‘‘ছেলেকে সব সময়ে চোখে চোখে রাখতে হয়। তাই আমি একটা মাত্র বাড়িতেই পরিচারিকার কাজ করি। সেখানে মাসে হাজার টাকা মেলে।’’ এই অবস্থায় ছেলের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত দেবনাথ দম্পতি। কোথা থেকে তার পড়ার খরচ জোগাড় হবে, আর কোথা থেকেই বা তার চিকিৎসার অর্থ জুটবে আগামী দিনে— তা নিয়ে ভাবতেই আপাতত ব্যস্ত এই পড়ুয়ার মা-বাবা।
তবে ছন্দকুমার ব্যস্ত তার আকাশে উড়ানের স্বপ্ন নিয়ে। হুইলচেয়ারের চাকায় হাত রেখে সে এ দিন বলে, ‘‘বড় হয়ে শিক্ষক হতে চাই।’’ আপাতত সেই পথে তার চলনশক্তি অন্তরায় না হলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের পরিবারের অভাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Examination Haringhata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE