দিন কয়েক আগে জলঙ্গির সরকার পাড়া গ্রামে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল দুই বাংলাদেশি। আর বৃহস্পতিবার সেই জলঙ্গিতেই আবারও ৭ বাংলাদেশিকে পাকড়াও করে বিএসএফ তুলে দিল পুলিশের হাতে। কেবল বাংলাদেশিরা নয়, তিন জন ভারতীয় দালালও ধরা পড়েছে। যারা ওই বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার সহযোগিতা করছিল।
বিএসএফ ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাংলাদেশিরা অনেক আগে এ দেশে প্রবেশ করেছিল। জলঙ্গির বিধায়ক তৃণমূলের আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বলছেন, ‘‘বাংলাদেশের বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক আমাদের দেশের কেরল, মুম্বাই, গুজরাটে কাজ করে বলে শুনেছি। কিন্তু তারা কিভাবে চোরাপথে এ দেশে প্রবেশ করে সেটাই বুঝতে পারি না। তবে বিএসএফ আগের থেকে অনেকটা সতর্ক হয়েছে। ফলে এখন অনুপ্রবেশ তেমন ভাবে আর হচ্ছে না বলেই শুনেছি।’’
পুলিশকর্তাদেরও একই দাবি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাসপিত সিংহ বলেন, ‘‘চোরাপথে অনুপ্রবেশ করে কিছু বাংলাদেশি আমাদের দেশের বড় বড় শহরে কাজ করে। তবে বিএসএফ এবং পুলিশ সতর্ক থাকার ফলে তারা ধরা পড়ছে। আগামী দিনে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকবে।"
পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, যারা আগেই এসেছিল, তারা এখন মরিয়া হয়ে ফিরতে চাইছে। তার কারণ, ভারতের বিভিন্ন বড় শহরে তল্লাশি অভিযান চলছে। ধরা পড়ার ভয়ে বাংলাদেশে ফিরতে চাইছে সে দেশের পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
আর এই সুযোগে দর চড়িয়েছে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার পাচারের কাজ করার দালালেরা। সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগেও সীমান্তের চোরা পথ দিয়ে ওপার থেকে এ দেশে প্রবেশ করতে বা কাজ শেষে এ দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরতে মাথা পিছু তিন হাজার টাকা দিতে হত। সেটাই এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চোরাপথে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক মুর্শিদাবাদের হাজার হাজার শ্রমিকের সঙ্গে কেরল থেকে শুরু করে নানা জায়গায় রাজমিস্ত্রি বা জোগাড়ের কাজ দীর্ঘ দিন ধরেই করে আসছে।
কিন্তু অবৈধ ভাবে ভিন্ দেশীরা এ দেশের বড় শহরগুলিতে এত দিন কাজ করছে কেমন করে?
পরিযায়ী শ্রমিকদের দাবি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ থাকার সময় বিষয়টি নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না এ দেশের প্রশাসনের। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ প্রশাসন কিছুটা হলেও নড়ে বসেছে বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতে। তা ছাড়া সামাজিক ভাবেও বেশ কিছুটা চাপে পড়েছে বাংলাদেশি পরিযায়ী শ্রমিকেরা। এর ফলেই পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে এক সঙ্গে ঘরে ফেরার চেষ্টা করছে অনেক পরিযায়ী শ্রমিক। আর তাতেই অনেকে বিএসএফ ও পুলিশের জালে ধরা পড়ছে। তবে তার পরেও অনেকে গোপনে সীমান্ত পার হচ্ছে বলেও দাবি স্থানীয় সূত্রের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)