সেলিম রেজা
মাস কয়েক ধরে বেশ নিরাপদেই স্কুলে যাতায়াত করছিলাম। বিএসএফেরও কোনও ঝুট-ঝামেলা ছিল না। হঠাৎ করেই বদল হল ব্যাটেলিয়ন। আর তার পর থেকেই ফের শুরু হল নানা রকম হয়রানি।
‘কেন আই কার্ড নেই? সরকারি চাকরি করো তা হলে আই কার্ড থাকবে না কেন? কী করে বুঝব তুমি শিক্ষক?— এমন হাজারও প্রশ্নবাণ সামলে তার পরে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি মিলছে। আর প্রতিদিন বিএসএফ জওয়ানদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার পথে এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে মন-মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে।
সীমান্তের চর পরাশপুর এলাকায় রবীন্দ্র রোকেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। বছরের নানা সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মাথায় নিয়েই স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। সরকারি স্কুলে চাকরি বলে সব কিছুই মেনে নিয়েছি। নিয়ম মেনে, যুদ্ধ করেই কালীগঞ্জ থেকে ওই স্কুলে যাতায়াত করি। বাড়ি থেকে মোটরবাইকে টলটলি ঘাট পর্যন্ত যাই। সেখানে বাইক রেখে কখনও নৌকায়, কখনও হেঁটে স্কুলে পৌঁছতে হয়। আমার স্কুলের যা ভৌগোলিক অবস্থান তা বাইরের লোকজন কল্পনাও করতে পারবেন না। এমন একটা জায়গায় স্রেফ পড়াতে গিয়ে এত হেনস্থা সহ্য করতে হবে কেন? মাঝে মাঝে মনে হয়, কচিকাঁচাদের পড়াতে এসে বড় অপরাধ করে ফেলেছি যেন!
আগের ব্যাটেলিয়নের জওয়ানেরা এক-আধটু চিনতেন। এঁরা সবাই নতুন মুখ। এ দিকে, শিক্ষা দফতর থেকেও আমাদের কোনও রকম পরিচয়পত্র দেয়নি। ফলে ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড নিয়েই স্কুলে যাই। কিন্তু তাতেও ভবি ভোলে না। জওয়ানেরা বলেন, ‘তোমার বাড়ি সীমান্ত থেকে অনেক দূরে। ফলে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড দেখিয়ে চরে যাওয়া যাবে না। তা ছাড়া তুমি যে শিক্ষক সেটা বুঝবো কী করে?’ বুঝুন, কাণ্ড!
সীমান্তে নানা ঝুট-ঝামেলার মধ্যে কাজ করেও একটা পরিচয়পত্র মেলেনি আমাদের। কবে জলঙ্গির ওই শিক্ষকের মতো কবে আমরাও মারধর খাব। তার পরে যদি শিক্ষা দফতর আমাদের কথা ভাবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy