E-Paper

বিড়ি শিল্পে ক্ষতি, সমস্যা স্কুলেও

গত কয়েক দিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা ক্ষেত্রে। শপিং মলগুলিতে কাজকর্ম শিকেয়। অনলাইনে কাজকর্ম হয় এমন দোকানেও বিক্রিবাটা কার্যত হচ্ছে না।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩০
গত কয়েক দিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা ক্ষেত্রে।

গত কয়েক দিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা ক্ষেত্রে। ছবি: সংগৃহীত।

বেলডাঙায় গোলমালের জেরে ইন্টারনেট পরিষেবা টানা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা। প্রশাসনিক কাজকর্ম তো শিকেয় উঠেছেই, বন্ধ অনলাইন লেনদেনও। কিছু ব্যাঙ্কে কাজকর্ম চললেও সাধারণ গ্রাহকদের ভোগান্তি তাতে কমছে না।

গত কয়েক দিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা ক্ষেত্রে। শপিং মলগুলিতে কাজকর্ম শিকেয়। অনলাইনে কাজকর্ম হয় এমন দোকানেও বিক্রিবাটা কার্যত হচ্ছে না। ট্রেনের টিকিট সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না মুর্শিদাবাদ থেকে। ডিসেম্বরের শেষে পরিবার নিয়ে পুরী বেড়াতে যাওয়ার কথা অরঙ্গাবাদের বিমল সরকারের। মঙ্গলবার সকালে নেট ফিরবে, এমনই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তা বাড়ানো হয়েছে বৃ্‌হস্পতিবার সকাল পর্যন্ত। ফলে এ দিনও তিনি আগাম টিকিট সংরক্ষণ করতে পারেননি। এক আত্মীয়কে টিকিট বুকিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। বর্ধমান থেকে সেই অগ্রিম টিকিট বুকিং করা হবে।

সব চেয়ে মুশকিলে পড়েছে স্কুলগুলি। শিক্ষা পোর্টালের সব কাজ বন্ধ সেখানে। নবম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশনের ভেরিফিকেশন চলছিল। ২০ নভেম্বর অর্থাৎ বুধবারই তার শেষ দিন। স্বাভাবিক ভাবেই মাথায় হাত পড়েছে স্কুলগুলির। প্রতিটি স্কুলেই এখন কেবল্‌ ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ হয়। সেগুলিতেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এবিটিএ-র জেলা সভাপতি জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও কাজ করা যাচ্ছে না। এত বড় জেলা। একটা অংশে গোলমাল হয়েছে। সেই এলাকার ইন্টারনেট বন্ধ রাখলেই পারত প্রশাসন। গোটা জেলাকে এ ভাবে অচল করে দেওয়া ঠিক হয়নি।’’

বিড়ি শিল্পাঞ্চল পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। বাইরের রাজ্যে বিড়ি পাঠানো যাচ্ছে না। বিড়ি মালিক সংগঠনের সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, ‘‘নেট বন্ধে বিড়ি শিল্পাঞ্চলের কাজ বন্ধ তো বটেই, জিএসটি জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল বুধবার। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের ফলে জিএসটি জমা দেওয়া যাবে না। এর ফলে লেট ফি-সহ প্রচুর টাকা জরিমানার মুখে পড়তে হবে। সাংসদ খলিলুর রহমানকে অনুরোধ করেছি যাতে কাল (বুধবার) দু’ ঘণ্টার জন্য হলেও ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা যায়। তা না হলে বিড়ি শিল্প চরম সঙ্কটে পড়বে।’’ বর্তমানে সাধারণ ব্যবসায়ীরাও লেনদেন করেন পেমেন্ট অ্যাপে। সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও। পেট্রল পাম্প চলছে না। হাসপাতালগুলি থেকে প্রতিদিন রোগী ও ওষুধের রিপোর্ট যায়। বন্ধ সে সবও। হাসপাতাল থেকে পাঠানো যাচ্ছে না অক্সিজেনের স্টক রিপোর্টও। শেয়ার বাজার, ব্যাঙ্কে গিয়ে ভোগান্তি হচ্ছে গ্রাহকের। ডাকঘরে জমা দেওয়া যাচ্ছে না কোনও প্রকল্পের টাকা। সাইবার ক্যাফে বন্ধ। তাই বিভিন্ন কলেজ, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির কাউন্সেলিং করতে পড়ুয়াদের ছুটতে হচ্ছে অন্য জেলায়। বিশেষ প্রয়োজনে গত শনিবার ডোমকলে শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন পেশায় শিক্ষক স্বপ্ননীল বসু। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখলাম মোবাইলে নেট চলে গেল। শ্বশুরবাড়ির ব্রডব্যান্ডও বন্ধ হয়ে গেল। আমার পেশাগত নানা প্রয়োজনে সব সময়ে নেট দরকার। খুবই সমস্যায় পড়েছি।’’

শাসক এবং বিরোধী দু’পক্ষই অবশ্য দ্রুত ইন্টারনেট বন্ধের পুলিশি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, ‘‘এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর গুজব আটকানো গিয়েছে। কাজের একটু অসুবিধে হচ্ছে বটে, কিন্তু জেলার সামগ্রিক পরিস্থিতি ভাল। এই সময়ে সমস্ত প্রশাসনিক কর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের উচিত, কোনও মন্তব্য না করা। সেই সঙ্গে প্রশাসনের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করে দেখা উচিত।’’

জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ ও দলের জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার ফলেই পরিস্থিতি সামলানো সহজ হয়েছে। গুজব রুখতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা জরুরি ছিল। আশা করি, দু’-একদিনের মধ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

school Portal Bank

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy