Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
CBI Investigation against Police

পুলিশের বিরুদ্ধেই সিবিআই তদন্ত

নীলাদ্রিশেখরের দাবি, ওই মাদক মামলা সম্পর্কে মোহনকে আগে কিছু জানানো হয়নি। পরে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP

নিজস্ব প্রতিবেদন
নদিয়া শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৯
Share: Save:

একটি অপমৃত্যুর মামলায় নদিয়ার মুরুটিয়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

গত ২৬ অগস্ট শওকত মণ্ডল নামে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ মৃতের ভাই মোহন মণ্ডল-সহ গোটা পরিবারকে অন্য এক খুনের মামলায় অভিযুক্ত করে।

এ দিন মোহনের আগাম জামিনের মামলার শুনানিতে এই তথ্য দেখে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, শওকতের মৃত্যুর পাশাপাশি অপর খুনের তদন্তও সিবিআই করবে। নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারকে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। রাতে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “হাই কোর্টের নির্দেশ হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কৃশানু রায়ও একই কথা জানিয়েছেন।

এ দিন মোহনের জামিনের সওয়াল করতে গিয়ে তাঁর আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ঘোষ এবং দেবর্ষি ব্রহ্ম দাবি করেন, এর আগে মুরুটিয়া থানা মোহনকে ১৩ বছরের পুরনো মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। পরে খুনের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যের কৌঁসুলির দাবি, মোহন ও তাঁর পরিবার খুনে যুক্ত।

নীলাদ্রিশেখরের দাবি, ওই মাদক মামলা সম্পর্কে মোহনকে আগে কিছু জানানো হয়নি। পরে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেই দিনই আদালত তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয়। গত ২৬ অগস্ট রাতে মুরুটিয়া থানার পুলিশ মোহনের বাড়িতে হানা দেয়। মোহন জামিন পেয়েছে শুনে পুলিশকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ চায়। তাঁর সম্পর্কিত ভাই শওকত টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে পেটাতে শুরু করে কিছু পুলিশকর্মী। চেঁচামেচি শুনে গ্রামবাসী জড়ো হলে পুলিশ শওকতকে তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ কোনও অভিযোগ নিতে চায়নি। তারা দাবি করে, পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে বাঁশঝাড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে শওকত মারা গিয়েছে। শওকতের পরিবার হাই কোর্টে মামলা করলে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মোহনের পরিবারের অভিযোগ, গত ১৯ সেপ্টেম্বর এফআইআর রুজু করার নির্দেশ আসার পর বিকেলেই অন্য একটি খুনের ঘটনায় তাঁদের জড়িয়ে দেওয়া হয়। নীলাদ্রিশেখরের দাবি, ‘‘মোহনদের বাড়ি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ওই খুন হয়। তার সঙ্গে মোহনের কোনও যোগসূত্র নেই।’’ আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, সম্প্রতি একাধিক মামলায় খুনের ধারার বদলে লঘু ধারায় মামলা করা নিয়ে হাই কোর্টে রাজ্য পুলিশের মুখ পুড়েছে। কিন্তু পুলিশ গভীর রাতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে এবং তোলাবাজির টাকা না পেয়ে পরিবারের সদস্যকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে— এমন অভিযোগ গুরুতর। হাই কোর্ট এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেওয়ার পর মামলাকারীকে অন্য মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে খাড়া করা কার্যত আদালতকে ‘অস্বীকার’ করার শামিল বলেও তাঁদের বক্তব্য। এই ঘটনা সত্যি হলে রাজ্যে আইনরক্ষকের আদৌ কোনও অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিয়েই জোরালো প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE