Advertisement
E-Paper

নমাজ শেষে মন্দিরে ওঁরা

রথের পরে নাটনা বড়তলার পূর্ব মন্দিরে কীর্তনের আসরটা নতুন নয়, ফি বছরই সেই আসরে আশপাশের গাঁ-গঞ্জ ভেঙে পড়ে। ভ্রূকূটিটা ধরা পড়েছিল এ বার ইদের চাঁদ সেই আসরে পড়ায়। বছর পনেরো আগে রথের আবহেই পড়েছিল ইদ। সেই পুনরাবৃত্তি ফের এ বার। তা হলে কি কীর্তনের আসর বসবে না?

কল্লোল প্রামাণিক ও অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০১:৩৬
বহমান: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলে বিশ্বাস। সোমবার রঘুনাথগঞ্জে ইদের নমাজ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বহমান: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলে বিশ্বাস। সোমবার রঘুনাথগঞ্জে ইদের নমাজ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

অস্বস্তি ছিল, কিঞ্চিৎ আশঙ্কাও। সোমবার সকালে সেই জোড়া উদ্বেগই উড়ে গেল খোলা মনের হাওয়ায়।

সে জন্য করিমপুরের মানুষজনকে যদি বাহবা দিতে হয় তা হলে সেই সদিচ্ছার জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য লালগোলার স্টেশন রোড লাগোয়া মানুষেরও।

রথের পরে নাটনা বড়তলার পূর্ব মন্দিরে কীর্তনের আসরটা নতুন নয়, ফি বছরই সেই আসরে আশপাশের গাঁ-গঞ্জ ভেঙে পড়ে। ভ্রূকূটিটা ধরা পড়েছিল এ বার ইদের চাঁদ সেই আসরে পড়ায়। বছর পনেরো আগে রথের আবহেই পড়েছিল ইদ। সেই পুনরাবৃত্তি ফের এ বার। তা হলে কি কীর্তনের আসর বসবে না?

দিন কয়েক ধরেই তা নিয়ে চাপা গুঞ্জন ছিল এলাকায়। সেই কুয়াশাটাই এ দিন কেটে গিয়ে ঝরঝরে রোদ উঠল নাটনায়। প্রাচীন বট গাছের নিচে পশ্চিম দিকে রয়েছে ইদগাহ মাঠ আর পূব কোণে মন্দির। দুই ধর্মস্থানের মাঝে এক টুকরো পাঁচিল। সেটুকুও মুছে দিয়ে রাম-রহিমের বোঝাপড়া দেখল নাটনা।

লালগোলা স্টেশন রোড লাগোয়া লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির আর রহমতুল্লা মাদ্রাসার জামে মসজিদের মধ্যে দূরত্বও বড় জোর হাত পঁচিশেক। আর, সেখানেও দুই কমিটির আলাপ আলোচনায় স্থির হয়, একই সঙ্গে হবে, সকালে লক্ষ্মীনারায়ণের পুজো আর তার পরে মাসাধিক কাল নিরম্বু উপবাসের পর খুশির ইদের নামাজ। ফলে ভোরে কেউ স্নান করে সুচিশুদ্ধ ধুতি-পাঞ্জাবি পরে, কেউ গোসল করে নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি পরে মাথায় টুপি চডিয়ে কানে আতর গুঁজে পাশাপাশশি দু’টি উপাসনালয়ে হাজির হয়েছিলেন।

নাটনায়, নমাজ শেষ হতে দু পক্ষের মানুষকেই ভিড় সামলে, পরস্পরকে জায়গা করে দিতে যেমন দেখা গিয়েছে তেমনই লালগোলার স্টেশন রোডেও এগিয়ে এসেছিলেন মাদ্রাসা ও মন্দির কমিটির কর্তারা।

ইদের তদারকিতে যেমন হিন্দুরা থাকলেন দিনভর তেমনি দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে পরস্পরের হাত ধরে অভিন্ন্দন জানাতেও দেখা গিয়েছে। নাটনা মন্দির কমিটির এক কর্তা বলেন, ‘‘নমাজের সময় বলে গানের সময় প্রায় দু’ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খুব পাশাপাশি দুটি অনুষ্ঠানের মাইক বাজলে সমস্যা হবে বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কোনও সমস্যা হয়নি।’’

ছবিটা হুবহু এক লালগোলা স্টেশন রোডেও। সকালে কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি দিয়ে শঙ্খধ্বনি দিয়ে লক্ষ্মীনারায়ণের পুজোর পরে মসজিদের ভিতর ইমামের নির্দেশ মেনে কয়েক শো মানুষ ইদ-উল-ফিতরের
নামাজ পড়েন।

মসজিদ কমিটির সম্পাদক সেরতাজ হুসেইন বলেন, ‘‘ইদের নামাজ শেষে আমরা অনেকে মন্দিরে পুজো দিতে আসা মানুষের সঙ্গে বুক বুক মিলিয়ে কুশল বিনিময় করেছি। তাতে মনটা প্রসন্ন হয়। হৃদয় উদার হয়। ইদ তো মিলনেরই উৎসব।’’

আর মন্দিরের পুরোহিত বিশ্বজিৎ পাঠক বলছেন, ‘‘আমরা উভয় সম্প্রদায় মানুষ পরস্পরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে সম্মান দিয়ে চলি। প্রয়োজনে সহায়তা করি। তাতে মনের প্রফুল্লতা বাড়ে।’’

Hindu Muslim Eid ইদ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy