টুকলির-খোঁজে: শান্তিপুর কলেজে। নিজস্ব চিত্র
বিএ দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্র সংসদ অফিস খুলে টুকলি বিক্রির অভিযোগ উঠল টিএমসিপি-র সাধারণ সম্পাদক এবং তাঁর কিছু সাঙ্গোপাঙ্গের বিরুদ্ধে।
ঘটনাস্থল ফের সেই শান্তিপুর কলেজ, যেখানে বোমাবাজি থেকে শিক্ষকের মাথায় বন্দুক ধরার মতো একের পর এক ঘটনায় জড়িয়েছে টিএমসিপি-র নাম। সাধারণ সম্পাদক মণি সরকার সেই মনোজ সরকারের ভাই, যাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষকের মাথায় পিস্তল ঠেকানোর অভিযোগ ছিল।
শান্তিপুর কলেজে এ বার কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজ এবং নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সিট পড়েছে। শুক্রবার ছিল অনার্সের চতুর্থ পত্রের পরীক্ষা। পড়ুয়াদেরই এক অংশের অভিযোগ, বেলা ১২টায় পরীক্ষা শুরুর খানিক আগেই কিছু ‘দাদা’ ঢুকে পড়ে কলেজে। ছাত্র সংসদ ও শৌচাগার থেকে ৫০-১০০ টাকায় টুকলি বিক্রি হতে থাকে।
এই কলেজে এ জিনিস নতুন নয়। আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার সময়ে প্রশ্ন বিলি হওয়ার পরেই তা পাঁচিল টপকে চলে গিয়েছে বাইরে। ছোট প্রশ্নের উত্তর হাতে লিখে আর বড় প্রশ্নের ক্ষেত্রে বইয়ের পাতা ফোটোকপি হয়ে চলে এসেছে। ছাত্র সংসদের বিভিন্ন ‘দাদা’র মাধ্যমে সে সব বিক্রি হয়েছে।
কিন্তু ছাত্র সংসদেরই একাংশ এই চুরিবিদ্যায় বিরক্ত। সহকারী সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আলি শেখের অভিযোগ, “পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্র সংসদ অফিস খোলা রাখা যায় না। তা জোর করে খুলে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতেই বিক্রি করা হয়েছে টুকলি। বারণ করে কোনও লাভ হয়নি।” মণি অবশ্য দাবি করেন, “সম্পুর্ণ মিথ্যা কথা। ছাত্র সংসদ অফিস বন্ধ ছিল। টুকলিও কেউ সরবরাহ করেনি।”
এই কাণ্ড যখন চলছে, শিক্ষকেরা কী করছিলেন?
কলেজের অধ্যক্ষ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যক্তিগত কারণে আমি আজ কলেজে যাইনি। তবুও যখনই শুনেছি যে ছাত্র সংসদ অফিস খোলা আছে, তা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি।” আর, কলেজে পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক পলাশ দাস বলেন, “পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বাইরে কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে তেমন কিছু হলে আমার কানে আসত।”
কর্তৃপক্ষ দায় ঝাড়ার চেষ্টা করলেও পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দেখা যায়, কলেজ চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা মাপের উত্তর লেখা ফোটোকপি। কাজ মিটে যাওয়ার পরে কলেজেই সেগুলি ফেলে গিয়েছে পরীক্ষার্থীরা। এ রকম কয়েক জনের কথায় স্পষ্ট, তাদের এ সব নালিশ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। সস্তায় টুকলি পেয়ে তারা দিব্যি খুশি। তাদের সোজা কথা, “টাকাটা বড় কথা নয়। দাদারা যা সহযোগিতা করেছে, কে করে বলুন!”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরাও বলছেন, সকলে টুকলি বিক্রির কথা জানেন। কিন্তু প্রকাশ্যে বলার ক্ষমতা কারও নেই। তাঁদের আশঙ্কা, পরিচালন সমিতির নির্বাচন নিয়ে যদি কলেজে ঢুকে শিক্ষকের মাথায় পিস্তল ধরা হয়, টাকাপয়সার লেনদেনের ক্ষেত্রে বাধা দিলে কি আর রক্ষে থাকবে?
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অয়ন দত্তের দাবি, “আমাদের কেউ এই ধরনের ঘটনায় জড়িত নয়।’’ তার পরেই আশ্বাস, ‘‘যদি কেউ জড়িত থাকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy