Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ছবি দেখে ছুটে গিয়ে শুনলেন ‘উভ্যাস আছে’

নীল-সাদা ডুরে ফুলহাতা জামার কনুইয়ের কাছটা ফাটা। পৌষ বেলায় থাক না রোদ্দুর, হিমেল একটা হাওয়াও তো আছে। —সোয়েটার পড়িসনি?

এই ছবিতেই টনক নড়েছিল প্রশাসনের।

এই ছবিতেই টনক নড়েছিল প্রশাসনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

নীল-সাদা ডুরে ফুলহাতা জামার কনুইয়ের কাছটা ফাটা।

পৌষ বেলায় থাক না রোদ্দুর, হিমেল একটা হাওয়াও তো আছে।

—সোয়েটার পড়িসনি?

ছেলেবেলার মগ্নতা নিয়েই বাটালির উপরে নাগাড়ে নেমে আসা বাঁশের খেঁটোটা থামিয়ে ছেলেটি বলছে, ‘‘নেই তো!’’

মহিলা একটু থমকান। কী বলবেন বুঝতে না পেরে ফের বলছেন, ‘‘এই যে ছেনি নিয়ে কাজ করছিস, হাত ফস্কে গেলে?’’

ছেলে ফের কটকটে গলায় জবাব দেয়, ‘‘ও কিছু হবিনে, উভ্যাস (অভ্যাস) আছে।’’ কাজে মন দেয় সে। সঙ্গে জুড়ে দেয় পাল্টা একটা প্রশ্ন— ‘‘ফুলদানি লিবে?’’

রাহুল বৈদ্য। নিবাস দক্ষিণ দিনাজপুরের সীমান্ত ছোঁয়া ঊষাহরণপুর। শিল্পমেলায় বাঁশের ছেলা কঞ্চি ঠুকে আটপৌরে ফুলদানি তৈরিতে ব্যস্ত বালকের ছবি বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারের পাতায় প্রকাশ পেতেই এ দিন সকালে হইচই শুরু হয়েছিল জেলা সদরে।

জেলাশাসকের ফোনে তড়িঘড়ি ছুটে এসেছিলেন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা। বোঝাতে গিয়েছিলেন, সদ্য বালকের হাতে অমন ধারালো ছেনি-বাটালি! তা ছাড়া এমন কাজে প্রশ্রয়ও কি দেওয়া হচ্ছে না শিশুশ্রমকে?

সিডব্লুসি-র চেয়ারম্যান রীনা মুখোপাধ্যায়ের উদ্বেগের মুখে ছেলেটির গ্রামীণ মা নিরুত্তাপ গলায় শুনিয়েছিলেন, ‘‘ছেলেবেলা থেকেই তো কাজ শিখতে হয়, না হলে খাবে কি!’’ রুনু বৈদ্যের পাশে বছর পাঁচেকের ছেলে তখনও ঠুকছে বাটালি। তবে, সিডব্লুসি-র কর্তাদের দীর্ঘ পাখি পড়া বোঝানোয় এক সময়ে বোধহয় কাজে দেয়। রফা হয় অন্তত এ মেলায় আর কাজ করবে না খুদেরা। কিন্তু মেলা শেষে, গ্রামে বাড়ি ফিরে গেলে?

রীণা বলেন, “জেলাশাসক ফোন পেয়েই আমরা মেলায় এসেছি। চেষ্টা তো করলাম। এখন কথা না শুনলে কী করা যাবে বলুন!’’ তাঁর গলাতেও হতাশা, উৎকণ্ঠাও।

তবে, দিন ভর তাঁদের বোঝানোর পরেও তাঁদের প্রাত্যহিক অভ্যাস থেকে কি সরে দাঁড়ালেন ওঁরা?

এ দিন দুপুরে, মেলায় গিয়ে চোখে পড়ল, বিভিন্ন স্টলে রাহুলের মতো বাচ্চাদের বাটালি নিয়ে ঠোকাঠুকি চলছেই। তাদের কারও বয়স, পাঁচ কারও বা সাড়ে ছয়।

তেমনই এক বালকের মা নির্বিকার গলায় বলছেন, “আমরাও তো ছেলেবেলায় এ ভাবেই কাজ শিখেছি। ওরা কাজ না শিখলে বাঁশের কাজটাই তো হারিয়ে যাবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child welfare committee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE