Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মতুয়া-ভোট টানতে লড়াই, সভার টক্কর তৃণমূল-বিজেপির

মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক এ বার কার? তা নিয়ে জেলায় তুমুল দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির। 

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুস্মিত হালদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক এ বার কার? তা নিয়ে জেলায় তুমুল দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির।

গত কয়েকটি নির্বাচনে নদিয়ায় জেলায় মতুয়া ভোট একচেটিয়া ভাবে তৃণমূলের দখলে ছিল। এ বার সামনে লোকসভা ভোট। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সেই ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি। আর তৃণমূলের কাছে এখন চ্যালেঞ্জ, বিজেপির সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে মতুয়া ভোট নিজেদের পক্ষে ধরে রাখা।

এ হেন টানাটানির কারণ সম্পর্কে রাজনৈতিক মহলের খবর, রানাঘাট লোকসভায় মতুয়া ভোট ৪৫ শতাংশ। ফলে ফলাফলের অন্যতম নির্ণায়ক শক্তি তাঁরা। ফলে শাসক ও প্রধান বিরোধী দল তাঁদের নিজেদে‌র দিকে টানতে ঝাঁপিয়েছে। দু’দলই সম্প্রতি প্রায় প্রতিযোগিতা করে মতুয়াদের নিয়ে পরপর সভা করছে।

প্রসঙ্গত, অসমে নাগরিকপঞ্জী নিয়ে বিতর্কের সময় তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে রাস্তা নেমেছিলেন মতুয়াদের একটা বড় অংশ। একাধিক দিন তাঁরা ট্রেন ও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের একাধিক জায়গায়। এর জের মিটতে না মিটতে কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালিতে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে জড়িত মতুয়ারা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপির অনেক প্রথম সারির নেতা। এর দিন সাতেকের মধ্যে কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ায় সভা করেন তৃণমূলের ছাতার তলায় থাকা মতুয়ারা। সেখানে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলার একাধিক বিধায়ক।

পাল্টা আবার বিজেপি শিবিরের মতুয়ারা সভা করেন চাকদহের শিমুরালি ও ধানতলার দত্তফুলিয়া এলাকায়। বিজেপির এক জেলা নেতার কথায়, “রানাঘাটে মতুয়া ভোট যে দিকে যাবে সে দলই জিতবে। এত দিন তৃণমূল তা একচেটিয়া ভাবে পেয়ে এসেছে। এ বার বিজেপি যে ভাবে মরিয়া তাতে তৃণমূলের পথ তত মসৃণ না-ও হতে পারে।” বিজেপি-র ওই নেতার কথায়, “ও পার থেকে অনেক অত্যাচার সহ্য করে মতুয়ারা এ পারে এসেছেন। সেই স্মৃতি তাঁদের মনে এখনও দগদগে ঘায়ের মত হয়ে আছে। এত দিন তাঁরা উপযুক্ত বিকল্প পাননি বলে তৃণমূলে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ বার তা হবে না। আমরা সেই বিকল্প জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছি।”

তবে বিজেপি-র পক্ষেও বিষয়টা এতটা সহজ হবে না বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। লড়াই হা়ড্ডাহাড্ডি হবে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের কথায়, “অসমে মতুয়া-নমঃশূদ্রদের বিদেশি নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করা আর নদিয়ায় এসে তাঁদের কাছে ভোট চাওয়ার যে দ্বিচারিতা বিজেপি চালাচ্ছে তা তাঁরা ধরে ফেলছেন। আমরাও বিজেপিকে গুরুত্ব দিই না, মতুয়ারাও দেয় না।” এর পাল্টা বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার দাবি করেছেন, “মতুয়ারা বুঝে গিয়েছেন যে, তৃণমূল তাঁদের শুধু ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করে যাবে। দেবে না কিছুই। তাঁরা আমাদেরই পক্ষে।”

মতুয়াদের মধ্যেও তৃণমূল ও বিজেপি শিবির-পন্থীদের স্পষ্ট বিভাজন। মতুয়া মহাসঙ্ঘের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা তথা কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘মতুয়ারা তৃণমূলের সঙ্গে ছিল, তাদের সঙ্গেই থাকবে।’’ অন্য দিকে, মতুয়াদের গেরুয়া শিবিরের নেতা দিব্যেন্দু ভৌমিকের দাবি, ‘‘তৃণমূল মতুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তা মতুয়ারা বুঝে গিয়েছে। তাঁদের ভোট আর তৃণমূল ধরে রাখতে পারবে না।’’

সব মিলিয়ে নদিয়ার ভোটের রাজনীতিতে ‘মতুয়া ফ্যাক্টর’ ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তা স্বীকার করছে সব মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Matua Mahasangha TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE