Advertisement
০৫ মে ২০২৪
সরুলিয়া গ্রামের ছবিটাই যে আমূল বদলে দিয়েছে শহর থেকে আসা ছেলেমেয়েগুলো

ধূমপান না করে খাবার খান, আর্জি পড়ুয়াদের

বেলডাঙা শহর লাগোয়া সরুলিয়া গ্রাম। নানা রোগের আঁতুড়ঘরও বলা চলে। সাক্ষরতার হারও কম। স্বাস্থ্যবিধির কোনও খবরই এঁরা রাখতেন না। কিন্তু এখন জানেন। কারণ তাদের দত্তক নিয়েছে বেলডাঙা এসআরএফ কলেজ। —শেষ পর্ব

সাফাই। ব্যস্ত পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র

সাফাই। ব্যস্ত পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০২:০৭
Share: Save:

দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গিয়েছে। সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা গিয়েছিল গ্রামেরই মেয়ে সাবিনা।

কী যে হয়েছিল, ধরতেই পারেনি মেয়েটা। তবে দেরি করেনি সে। পেটে তখন সন্তান। রোগ যে বাসা বেঁধেছে, শরীর তা জানান দিতেই ছুটে গিয়েছিল কাছের বেলডাঙার ব্লক হাসপাতালে। ডাক্তার দেখেশুনে কী যেন খসখস করে লিখে দিয়েছিল সাদা কাগজে। নিয়ম মেনে ওষুধও খেয়েছিল সে।

তবু, শেষ রক্ষে তো হয়নি। সন্তানের মুখও দেখতে পায়নি মেয়েটা। বহরমপুরের হাসপাতালে মারা গিয়েছিল সাবিনা।

পরে অবশ্য বাড়ির লোক জানতে পেরেছিলেন অপুষ্টিতে ভুগছিল সাবিনা। আর সেই জন্যই সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল মেয়েটার। মৃত্যুর কারণও সেটাই।

কিন্তু এই ‘অপুষ্টি’ রোগটাকে আর ভয় পায় না সরুলিয়ার বাসিন্দারা। কারণ তাদের পাশে আছে বেলডাঙা এসআরএফ কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। ফেব্রুয়ারির ৯ থেকে ১৫ তারিখ, টানা সাত দিন ধরে বেলডাঙা কলেজের ৫০ জন ছাত্রছাত্রী হত্যে দিয়ে পড়েছিল সরুলিয়ায়। এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষকে সচেতন করতেই এই কর্মকাণ্ড। সচেতনতার পাঠের বিষয় অনেক কিছু— পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, অপুষ্টি, থ্যালাসেমিয়া, হৃদরোগ কী, কেন, কী ভাবে আটকানো যায় ইত্যাদি।

টালি ছাওয়া বাড়ির ফটকে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েগুলোর কথা মন দিয়ে শুনছিলেন সবুর আলি। বললেন, ‘‘সবই তো বুঝলাম। কিন্তু এ তো জ্বর নয়, যে গা গরম হবে। বুঝব কী করে অপুষ্টিতে ভুগছে কেউ?’’ ছাত্রছাত্রীরা তাঁর স্ত্রীকেও ঘর থেকে ডেকে আনে। দু’জনকে এক সঙ্গে বোঝায়— ‘‘প্রথমে দেখবেন, শরীরে ক্লান্তির ভাব। ঘুমালেও তা কাটছে না। চোখের নীচে কালো ছোপ। এই সবই লক্ষণ।’’ তারা আরও সাবধান করে, ‘‘শিশুরাও চনমনে না থাকলেই হাসপাতালে নিয়ে যান।’’

হৃদরোগের একটা বড় কারণ পুরুষদের ধূমপানের বহর। বলতে থাকে এক পড়ুয়া, ‘‘সারা দিন মাঠে কাজ করে খালি পেটে ধূমপান করাই সর্বনাশ ডেকে আনে। ভাল চাইলে ও সব বন্ধ করুন। সেই টাকায় ভাল খাবার খেতে হবে। আর বুকে ব্যাথা করলেই ডাক্তার দেখান।’’ বিয়ের আগে রক্তপরীক্ষা করিয়ে থ্যালাসেমিয়া আছে কি না জেনে নেওয়াও জরুরী, বোঝায় বেলডাঙা এসআরএফ কলেজের ফিরজা, জসিমুদ্দিনরা। কারণ বাবা-মা যদি বাহক হয়, সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হবেই।

এনএসএস কার্যক্রমের প্রোগ্রাম অফিসার পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘সরুলিয়ার ছবিটাই বদলে গিয়েছে। কৃতিত্ব অবশ্যই ছেলেমেয়েগুলোর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health awareness campaign Beldanga Sarulia Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE