Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Communal harmony

দশরথের রক্তে বিপদ কাটল ইসমাইলের

এই নিয়ে ৫ বার রক্ত দিলেন দশরথ। প্রতিবারই কোনও না কোনও মুমূর্ষের প্রয়োজনে এ ভাবেই ছুটে আসতে হয়েছে তাকে।

রক্তদাতা: দশরথ দাস।

রক্তদাতা: দশরথ দাস।

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:১৬
Share: Save:

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন দশরথ দাসের রক্তে আপাতত বিপদ কাটল বছর ৩২ বয়সের ক্যানসার আক্রান্ত ইসমাইল শেখের। আবার, রান্না করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া মুমূর্ষু তরুণী রুবিনা খাতুনকে রক্ত দিলেন আব্দুল আজিজ শেখ। দু’জনেরই দরকার ছিল নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত, জেলার একাধিক হাসপাতাল ঘুরেও তা না মেলায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেন দশরথ ও আজিজ।

দুই পঙ্গু পা নিয়ে চলতে পারেন না দশরথ। পঙ্গু বাঁ হাতও। হাত দিয়ে হাঁটেন। সুতি থানার মহেন্দ্রপুর গ্রামের ইসমাইলের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়েছে। প্রাথমিক ভাবে ভর্তি হয়েছেন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু তাঁর দরকার যে ‘ও নেগেটিভ’ রক্ত, তা বিরল। জঙ্গিপুরে এমনিতেই রক্ত নেই। একাধিক ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত থাকলেও ও নেগেটিভ শূন্য। শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিবার যোগাযোগ করেন অরঙ্গাবাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার কবির আলির সঙ্গে। তিনিই শনিবার বিকেলে দশরথকে তুলে আনেন ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জামা গ্রামের বাড়ি থেকে। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে এসে রক্ত দেন দশরথ ইসমাইলের জন্য।

এই নিয়ে ৫ বার রক্ত দিলেন দশরথ। প্রতিবারই কোনও না কোনও মুমূর্ষের প্রয়োজনে এ ভাবেই ছুটে আসতে হয়েছে তাকে। শেষ বার রক্ত দিয়েছেন ২৪ ডিসেম্বর ১২ বছরের কিশোরী সোমাইয়া সুলতানার অপারেশনের জন্য। দশরথের বাড়িতে মা, বাবা ও ৪ ভাই। দশরথ মধ্যম। দশরথ বলছেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত গ্রামের পাশের স্কুলেই পড়াশোনা করে আর এগোতে পারিনি। মায়ের কাছে শুনেছি আমার বয়স যখন বছর দেড়েক তখনই পা অসাড় হতে থাকে। বহু চেষ্টা হয়েছে চিকিৎসার। কিন্তু কাজে আসেনি। সেই থেকেই চলার ভরসা হাতই। ট্রাই সাইকেল একটি রয়েছে। কয়েকটি ছেলে মেয়েকে গৃহশিক্ষকতা করে যা পাই সেটাই আমার আয়। যতই কষ্ট হোক, রক্তের প্রয়োজন পড়লে ছুটে যাই।”

সাগরদিঘির বিনোদবাটী গ্রামের তরুণী রুবিনার রান্নার সময়ে উনুনের আগুন ধরে যায় শাড়িতে। তা থেকেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভর্তি হয়েছেন সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। রক্ত লাগবে জানিয়ে দেন চিকিৎসক, যাঁর গ্রুপ বি নেগেটিভ। একই অবস্থা এক্ষেত্রেও। জেলার ব্লাড ব্যাঙ্কেও মেলেনি রক্ত। অগত্যা তাঁর পরিবার দ্বারস্থ হন স্বেচ্ছাসেবী কর্মী সঞ্জীব দাসের। তিনিই ফোন করেন সন্তোষপুরের আব্দুল আজিজ শেখকে। বিকেল নাগাদ সাগরদিঘি হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দেন তিনি।

আব্দুল আজিজ শেখ বলছেন, “যখনই এমন বিপদে পড়েন কেউ, তখনই যাই। এই নিয়ে অনেক বারই রক্ত দিলাম এ ভাবেই।”

সুতির স্বেচ্ছাসেবী কর্মী আব্দুল কবির বলছেন, “রোজার শুরু থেকে গত এক সপ্তাহে এভাবেই অন্তত ৪৩ জন সদস্য রক্ত দিলেন হাসপাতালে এসে।”জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার অবিনাশ কুমার বলছেন, “পা, হাতের পঙ্গুত্ব নিয়ে যে মনের জোরে রক্ত দিতে এগিয়ে এসেছেন দশরথ তা প্রশংসার ভাষা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jangipur Blood Donation Communal harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE