Advertisement
E-Paper

পুরোহিতকে অভয় দিলেন ইমাম, ধর্ম ধুয়ে দিল রক্ত-শিবির

প্রতি বছরের মতো, এ দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল রাধানগর বয়েজ ক্লাব। সকাল থেকে কালী বারোয়ারির সামনে মাইক গর্জে চলেছে, ভেজা দিনে কে আর এগিয়ে আসে! ক্লাবের সদস্যরা তাই একে একে রক্ত দিয়ে যাচ্ছিলেন।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩১
পাশে আছি। শুক্রবার রাধানগরের রক্তদান শিবিরে। নিজস্ব চিত্র

পাশে আছি। শুক্রবার রাধানগরের রক্তদান শিবিরে। নিজস্ব চিত্র

ছোট ম্যারাপ চুঁইয়ে অনর্গল আষাঢ়ের জল, তারই আড়ালে শিবির বসেছে, রক্তদানের।

মসজিদ থেকে সে পথে বাড়ি ফিরছিলেন কৃষ্ণনগরের রাধানগরের স্থানীয় ইমাম সরফরাজ মণ্ডল। মনে হয়েছিল ‘এমন একটা ভাল উদ্যোগ, পিছিয়ে থাকব!’ একটু ইতস্তত করে এগিয়ে এসেছিলেন রক্ত দিতে।

তবে, রক্ত দেওয়ার তেমন কোনও ইচ্ছে ছিল না, নেহাতই বৃষ্টিতে আটকে পড়ে ম্যারাপের তলায় বসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, পার্থ চক্রবর্তী। পাড়ার ছেলেপুলের কাছে যাঁর পরিচয় ‘পুরোহিত কাকু’। পিছিয়ে থাকেন কেন তিনি, ইমামের পাশের লম্বাটে নেয়ারের খাটে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন— ‘‘নাও বাবা, আমারও একটু রক্ত নাও, রক্তের তো কোনও জাত-ধর্ম হয় না!’’ হনন-হানাহানির নিরন্তর রক্তক্ষয়ের মাঝে, শুক্রবার সকালে সরফরাজ আর পার্থ, ধর্মের উর্ধ্বে উঠে নজির যেন গড়লেন রক্তের রং, জাত, ধর্ম— হয় না কিছুই।

প্রতি বছরের মতো, এ দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল রাধানগর বয়েজ ক্লাব। সকাল থেকে কালী বারোয়ারির সামনে মাইক গর্জে চলেছে, ভেজা দিনে কে আর এগিয়ে আসে! ক্লাবের সদস্যরা তাই একে একে রক্ত দিয়ে যাচ্ছিলেন। দু’এক জন মহিলাও এগিয়ে এলেন বেলার দিকে। সরফরাজের পা পড়ল সেই সময়েই।

একটু সংকোচ করেই জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘আমি কি রক্ত দিতে পারি?’’ হকচকিয়েই গিয়েছিলেন ক্লাবের ছেলেরা। সরফরাজকে দেখে এগিয়ে এসেছিসলেন মনিরুল হোসেন আর দীপঙ্কর শেখও। তবে, ছবিটা আরও নিটোল হল যখন, পার্থবাবু বাড়িয়ে দেওয়া হাতে হাত রাখলেন সরফরাজ। সারাটাখন তাঁর মাথার কাছে বসে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সরফরাজ বললেন, “এটাই আমার প্রকৃত ভারবর্ষ। আমরা আগেও এক ছিলাম আর ভবিষ্যতে এক থাকব।”

রক্তদেওয়ার পরে সরফরাজ মন্ডলের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে পার্থ বলছেন, “ওঁকে দেখে আমারও মনে হল এটাই তো আসল সুযোগ সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার। যারা ধর্মের নামে হিংসা ছড়াচ্ছে তারা আসলে ধর্ম বিরোধী।” হঠাৎ এ ভাবে রক্ত দেওার ইচ্ছে হল কেন? ইমাম বলেন, “ক’দিন ধরে চারদিকে হিংসার পরিবেশ দেখে মনের ভিতরটা কেমন অস্থির হয়ে উঠছিল। মনে হল হিন্দু এলাকায় রক্তদান শিবিরে অংশ নিয়ে যদি কোন ভাবে মিলনের বার্তা দিতে পারি।” আর পার্থ? বলছেন, “জীবনে এই প্রথম রক্ত দিলাম। একটা ভয় কাজ করত। কিন্তু এ দিন ইমাম সাহেবকে দেখে মনে হল এই মিলন মেলায় আমিই বা দূরে থাকব কেন।”

Blood Donation Camp Hindu Muslim সরফরাজ মণ্ডল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy