শেষতক নারদ এসে হাজির হল করিমপুরেও!
এবং সে কালি মুছতে ‘মানুষের’ অস্ত্রেই ভরসা রাখছেন শুভেন্দু অধিকারী।
দিনকয়েক আগেই তিনি জানিয়েছিলেন—তাঁর হাতে কাগজে মুড়ে কী তুলে দেওয়া হচ্ছে, তা ফুল না টাকা তা প্রমাণ করতে হবে নারদকেই। প্রচ্ছন্ন হুমকিও ছিল শুভেন্দু অধিকারী ছেড়ে কথা বলবেন না। রবিবার দলীয় প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে প্রচারে এসে করিমপুরেও শুভেন্দু জানিয়ে গেলেন, ‘‘বিরোধীরা সারদা-নারদা বলে যতই হইচই করুক, মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে।’’
এ দিন জোটকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘‘খাল কেটে কুমির আনবেন না। সিপিএম জোটের নামে কংগ্রেস দলটাকে গিলে ফেলবে। প্রফুল্ল সেনের দলের মতো হাল করেই ছাড়বে।’’ এ দিন দুপুরে মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে করিমপুরের নতিডাঙা মোড় থেকে নাটনা মোড় পযর্ন্ত মিছিল করে তৃণমূল। মিছিলের শেষে নাটনা মোড় সংলগ্ন এলাকায় একটি সভাও করেন শুভেন্দু।
সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘বেইমান অধীর কংগ্রেস দলটাকে সিপিএমের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। যে সিপিএমের হাতে হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছে, অধীরের কংগ্রেস এখন সেই সিপিএমের পায়ে পড়ছে। এর থেকে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। অধীরের কংগ্রেস এখন ভোট কাটা পার্টি।’’ তবে সামান্য ওই সময়ের বক্তব্যে নাম না করে সিপিএমের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘‘যতই নির্বাচন কমিশনের ভয় দেখাও, তোমরা এখানে হারবে।’’
সীমান্তঘেঁষা করিমপুর এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কার্যত রজনৈতিক দলগুলির দখলে ছিল। সকাল ১০টার পর থেকে নতিডাঙা মোড়ে জড়ো হন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ফলে তখন থেকে ওই এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে ৩ কিমি রাজ্য সড়ক ধরে বাজারের ঘিঞ্জি রাস্তায় মিছিল চলে প্রায় ১২ নাগাদ। ফলে স্তব্ধ হয়ে পড়ে করিমপুর। অন্যদিকে, এ দিন বিকেলে উল্টো পথে হাটে বাম-কংগ্রেস জোটের মিছিল। নাটনা মোড় থেকে শুরু করে সেই নতিডাঙাতেই শেষ হয় মিছিল। উভয় দলের নেতা-কর্মীদের দাবি, ১০ হাজারের বেশি মানুষ যোগ দিয়েছেন তাঁদের মিছিলে।
তৃণমূলের দাবি, এমন মিছিল করিমপুর আগে কখনও দেখেনি। তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রও বলছেন, ‘‘আজকের মিছিল বলে দিচ্ছে করিমপুর আগামী দিনে কার। অশুভ জোটকে মানুষ মেনে নিচ্ছে না। আমার বাবা মায়ের মতো কংগ্রেস কর্মী যাঁরা হাত ছাড়া আর কিছুই চেনেন না, তাঁরা এখন বলছেন—ভোট দেওয়ার জায়গা নেই। কংগ্রেসের ভোট আমাদের ঘরেই আসবে।’’ মহুয়ার দাবি, ‘‘করিমপুর বামদূর্গ কথাটি ঠিক নয়। এখানে আগাগোড়া ডানপন্থী ভোটার বেশি। কেবল ভোট ভাগ হওয়ার কারণে বামেরা ফাঁকা মাঠে গোল দিত। এ বার আর সেই সুযোগ নেই।’’
সিপিএমকে আক্রমণ করে শুভেন্দু এ দিন বলেন, ‘‘সিপিএম এলে আবারও রাজ্য জরুরি অবস্থা তৈরি হবে। মরিচঝাঁপি থেকে নন্দীগ্রাম বা নেতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটবে রাজ্যে। তাপসী মালিকের মতো পুড়ে মরতে হবে মা-বোনেদের।’’ বাম-কংগ্রেস জোটের পাশাপাশি এ দিনের সভায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারেরও সমালোচনাও করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রে একটা সরকার আছে যারা ক্ষমতায় আসার আগে অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। কাজের বেলায় কিছুই হয়নি। এ রাজ্যে এসে বলেছিল ভাগ মমতা ভাগ। দিল্লিতে ওরা হেরেছে। বিহারে গোহারা হেরেছে। আর এ রাজ্যের মানুষ বলছে ভাগ বিজেপি ভাগ।’’ করিমপুরের সিপিএম প্রার্থী সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘জোটকে বার বার কটাক্ষ করেই তৃণমূল বুঝিয়ে দিচ্ছে জোট নিয়ে ওরা কতটা উদ্বিগ্ন। এ দিন জোটের মিছিলে মানুষের যা সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা অভিভূত। মানুষ যে জোটের পক্ষেই সেটা আমরা এ দিনও বুঝতে পেরেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy