ডিউটি পরিবর্তনের সময়ে এক আধিকারিকের পিস্তল ছিনিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র ব্যাটালিয়ানের কনস্টেবল বিভাস ঘোষ (২৭)। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ১০ দিন ধরে চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না তাঁকে। বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় তাঁর।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিভাসকে উদ্ধার করে প্রথমে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। জানা গিয়েছে, মৃতের স্ত্রী অন্তঃসত্বা। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে জ্ঞান হারিয়েছিলেন তিনি।
কনস্টেবলের আত্মহত্যার চেষ্টার কারণ হিসেবে ‘মানসিক অবসাদ’ কে দায়ী করেছিল তাঁর দফতর তবে পরিবার থেকে সেই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে। মৃতের পরিবারের দাবি, কর্মস্থলে আত্মহত্যা করার চেষ্টার কারণ হতে পারে কর্মস্থলে অশান্তি। পরিবার অস্বীকার করলেও ‘মানসিক অবসাদ’ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন প্রতিবেশী ও বন্ধুরা। তাঁদের দাবি, ছোট বেলায় মাকে হারানোর পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগতেন বিভাস। নবদ্বীপের এক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা চলেছিল তাঁর। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছিলেন। বন্ধু ও পরিবার সূত্রে খবর, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে একবার তাঁর মানসিক অসুস্থতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। চিকিৎসকের পরামর্শ মত ‘স্ক্রিৎজোফেনিয়া’ চিকিৎসা চলেছিল দীর্ঘদিন। তবুও মাঝে মধ্যেই চুপ করে থাকতেন তিনি। প্রতিবেশীদের দাবি, বাড়িতে কোনও অশান্তি হলে তিন-চার দিন ঘর থেকে বার হতে দেখা যেত না।
মৃতের দীর্ঘদিনের বন্ধু সুব্রত জানাচ্ছেন, ‘‘ছোটবেলায় ওর মা মারা যায়। তারপর থেকে দীর্ঘদিন কারও সাথে কথা বলত না। তবে নতুন মায়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। তবুও নিজের মায়ের কথা উঠলেই চুপচাপ হয়ে যেত। বিয়ের পর থেকেই মায়ের কথা বেশি করে বলত। কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইত না। প্রতিবেশী সুভাষ মণ্ডল জানাচ্ছেন, ‘‘বাড়িতে অন্যরা অশান্তি করলে ঘরের মধ্যে দরজা দিয়ে বসে পড়ত ও। অশান্তি থেমে গেলেও বার হত না। গুম হয়ে থাকত। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ছেলের মানসিক অসুখ শুরু হয়।’’
কৃষ্ণনগরের কোতওয়ালি থানার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা ছিলেন বিভাস। ছোট থেকেই ছিলেন মেধাবী। স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে কৃষ্ণনগরের একটি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পরে বিজ্ঞানে (বায়োসায়েন্স) স্নাতক হন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভাসের স্বপ্ন ছিল স্কুলশিক্ষক হবেন। সেই জন্য করিমপুরের একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে বিএড-ও করেছিলেন। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। বছর তিনেক আগে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষায় সফল হয়ে ওই চাকরিতেই যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কর্মক্ষেত্র ছিল উত্তর ২৪ পরগনা।
২ জুন রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুলিশ জেলার গোপালনগর থানার ১০ মাইল এলাকায় নাকা চেকিংয়ের সময়ে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের সার্ভিস রিভলভার ছিনিয়ে নিয়ে নিজের মাথায় গুলি চালিয়েছিলেন তিনি।জানা গিয়েছে, জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। সোমবার বেথুয়াডহরি থেকে কর্মস্থলে ফিরে কাজে যোগ দেন। তার পরেই এই অঘটন! পরিবারের দাবি, রাতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন বিভাস। শরীরের যত্ন নিতে বলেছিলেন।
মৃতের পরিবার কলকাতায় এসেছেন নদিয়ার বিষ্ণুপুরের বাড়িতে দেহ নিয়ে যেতে।