ছবি রয়টার্স।
জেলার হাসপাতালগুলিতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা কমানো এবং জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আইসোলেশন ব্যবস্থাকে একটি সুসংহত ব্যবস্থায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে পদক্ষেপ করল নদিয়া জেলা প্রশাসন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে এই ব্যবস্থা বলে জানা গিয়েছে।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের রাখার জন্য নদিয়ায় ইতিমধ্যেই দু’টি ‘কোভিডট-১৯ হাসপাতাল’ প্রস্তুত করা হয়েছিল। সে দু’টিতে এখনও পর্যন্ত কেউ ভর্তি হয়নি। তারই একটি, কৃষ্ণনগরের কাছে ভাতজাংলার গ্লোকাল হাসপাতালকে ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস’ (SARI বা সারি) হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। সেখানেই থাকবে আইসোলেশনের যাবতীয় ব্যবস্থা। করোনা সন্দেহভাজনদের পাশাপাশি তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষজনকেও চিকিৎসা করা হবে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। জেলা সদর, মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ভাবে ‘সারি’তেই আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে আইসোলেশনের ব্যবস্থা থাকছে। আপাতত কল্যাণীর এসএনআর কার্নিভাল হাসপাতালটিই শুধু কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে কাজ করবে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, করোনা প্রস্তুতি হিসেবে প্রচুর নিভৃতবাস কেন্দ্র (কোয়রান্টিন সেন্টার) গড়ে তোলার পাশাপাশি দীর্ঘ দিন বন্ধ পড়ে থাকা বেসরকারি গ্লোকাল হাসপাতাল এবং কল্যাণীর কার্নিভালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে একটি ৬৫ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডও তৈরি করা হয়। কিন্তু হাওড়া এবং এনআরএস হাসপাতালে সংক্রমণ ছড়ানোর পরেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশ আসে যে কোনও হাসপাতাল চত্বরে আইসোলেশন ওয়ার্ড রাখা যাবে না। আলাদা করে একটি ‘সারি’ হাসপাতাল তৈরি করে সেখানেই সমস্ত শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের রাখতে হবে। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই তড়িঘড়ি গ্লোকালকে ‘সারি’ হাসপাতালে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাকি বেশির ভাগ আইসোলেশন ওয়ার্ড গুটিয়ে আনায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মীও কম লাগবে। পিপিই কম খরচ হবে। সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও অনেকটাই কমে যাবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু থাকছে। তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালেও ১০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু থাকছে। সেখানে দু’টি ভেন্টিলেটরও রাখা হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, এমনিতেই জেএনএম হাসপাতালের নিজস্ব আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে। তারা সেটিই ব্যবহার করছে। তেহট্টের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যভবন থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে আসা হয়েছে। কারণ বার্নিয়ায় দিল্লি সংযোগে পাঁচ জনের করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তেহট্ট এমনিতেই স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে। তার উপরে এই মহকুমার এমন অনেক জায়গা আছে যা জেলাসদর কৃষ্ণনগর থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে। সেই কারণেই তেহট্টে আইসোলেশন ওয়ার্ড রেখে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, শ্বাসকষ্ট নিয়ে এমন রোগী আসতেই পারেন যাঁর করোনার অন্য উপসর্গ প্রকট নয়। ফলে চিকিৎসক ভুল করে তাঁকে সাধারণ রোগী ভেবে মেডিসিন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা। সেই কারণেই সারি হাসপাতাল খোলা হয়েছে। করোনা হোক বা না হোক, প্রবল শ্বাসকষ্টের রোগীদের সেখানেই চিকিৎসা করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। তাতে করোনাভাইরাস মিললে রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে কল্যাণীর কার্নিভ্যাল কোভিড-১৯ হাসপাতালে।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, আইসোলেশনে থাকার সময়েও কোনও করোনা সন্দেহভাজনের প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। অথচ তাঁর লালরস পরীক্ষার রিপোর্ট হয়তো তখনও এসে পৌঁছয়নি। তাই তাঁকে কোভিড হাসপাতালে পাঠানো যাচ্ছে না। তাঁর ভেন্টিলেটর প্রয়োজন, অথচ তাঁকে সাধারণ হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডেও ভর্তি করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি যাতে তৈরী না হয়, তার জন্যই তৈরি করা হয়েছে ‘সারি’ হাসপাতাল। সেখানে ভেন্টিলেটর থেকে শুরু করে ডায়ালিসিস মেশিন পর্যন্ত সব থাকছে। গ্লোকাল হাসপাতালে সে সব আগে থেকেই পর্যাপ্ত সংখ্যায় ছিল। বস্তুত কার্নিভালের চেয়ে গ্লোকালের পরিকাঠামো তুলনায় বেশি উন্নত। সেখানে ভেন্টিলেটর রয়েছে সাতটি। জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “যেহেতু করোনা পজ়িটিভের তুলনায় সন্দেহভাজনের সংখ্যা সব সময়েই বেশি হয়, তাই তুলনায় বড় গ্লোকাল হাসপাতালকেই ‘সারি’ হাসপাতাল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy