Advertisement
E-Paper

‘সংসার চলছে না, কবে যে সব স্বাভাবিক হবে’

স্টেশনের যাত্রী এবং ট্রেন চলাচলের ওপর রুজি নির্ভরশীল অনেক মানুষই একই সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন ।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ০৫:৩৪
অপেক্ষা। নিজস্ব চিত্র।

অপেক্ষা। নিজস্ব চিত্র।

বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একটা কাঠের দরজা। এক চিলতে ফাঁক করে খুলে রাখা সেই দরজা আরও কিছুটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দারিদ্রের চিত্রটা আরও বেআব্রু হয়ে পড়ল। চিলতে ঘরের এক কোণে চুপ করে বসে রয়েছেন যিনি তিনি এই বাড়ির মালিক। সপ্তাহ দুয়েক আগেও দিনভর এ ট্রেনে, সে ট্রেনে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। তবে করোনা আবহে সপ্তাহ দুয়েক ধরে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর তাতেই রোজগারহীন হয়ে দিন কাটছে সমীর সাহার। গত কয়েক দিনের অব্যবহারে ধুলো জমেছে তাঁর ঝালমুড়ি তৈরির টিনের পাত্রেও। জং পেঁয়াজ কাটার ছোট্ট ছুরিতে। তবে শুধু সমীরই নন, স্টেশনের যাত্রী এবং ট্রেন চলাচলের ওপর রুজি নির্ভরশীল এমন অনেক মানুষই একই সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন ।

সমীরের স্ত্রী মনা জানান, তিনি স্থানীয় কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। আপাতত সেই রোজগারেই টেনেটুনে সংসারটা চলছে। ওই দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে কলেজে পড়েন। তবে অনটনে সম্প্রতি তিনি একটা দোকানে কাজ নিয়েছেন। বেলডাঙা পুরসভার বড়ুয়া কলোনি ও সরুলিয়া কলোনিতে সমীরের মতোই আরও অনেক হকার, ফেরিওয়ালার বাস। বেলডাঙা স্টেশনের এক ও দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মেও বেশ কয়েক জনের অস্থায়ী, গুমটি দোকান রয়েছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় তাঁদের সকলেরই অবস্থা অথৈবচ। বেলডাঙা স্টেশনে বসে চা, ঝালমুড়ি বিক্রি করেন গণেশ চক্রবর্তী। গতবার লকডাউনে ট্রেন বন্ধ হলে কিছুদিন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু এবার তাঁর বাড়িতেই দিন কাটছে। তাঁর কথায়, ‘‘এবার সংক্রমণ তো আরও খারাপ চেহারা নিয়েছে। গত বারের চেয়েও এবার অনেক বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। ফলে রাস্তাঘাটে লোকজন প্রায় বেরোচ্ছেন না। যাঁরা বেরোচ্ছেন, তাঁরাও ঝালমুড়ি খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নন।’’ গণেশের স্ত্রী অর্চনার গলায় সংসার চালানো নিয়ে উদ্বেগ ঝরে পড়ল। তাঁর কথায়, ‘‘কত দিন ট্রেন বন্ধ থাকবে জানি না। আমাদের সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। দিন আনি দিন খাই পরিবারে ডাল-ভাত জোটাতে গিয়েও হিমশিম অবস্থা। সংসার চলছে না। কবে যে সব স্বাভাবিক হবে!’’ ট্রেনে ফেরি করা তারক বিশ্বাস, অসীম বিত্তার, বাচ্চু সিংহ, দিলু সাহা, পরিমল দাসদের পরিবারেরও সদস্যদের একই চিন্তা। বেলডাঙা স্টেশনের এক কোণে জুতো সেলাইয়ের ছোট্ট দোকান মন্টু দাসের। তাঁর খদ্দের মূলত ট্রেনের যাত্রীরাই। ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার পর একদিনও তিনি দোকান খোলেননি। তাঁর গলায় হতাশা— ‘‘কী জন্য দোকান খুলব। ক্রেতা আছে। আমার দোকানে যাঁরা আসেন তাঁরা ট্রেনেরই যাত্রী। যতদিন ট্রেন আবার চালু না হয় এভাবেই আয়হীন হয়ে দিন কাটবে। অন্যদিকে, ট্রেনে ভিক্ষা করেও অনেক ভিক্ষুকের সংসার চলে। আতান্তরে তাঁরাও। ট্রেনে ভিক্ষা করে সংসার চালানো এক বৃদ্ধা বললেন, ‘‘প্ল্যাটফর্মের এক কোণে পড়ে থাকি। চলাফেরার শক্তি নেই। বিকেলে কিছু মানুষ আসেন প্ল্যাটফর্মে গল্পগুজব করতে। তাঁদের অনেকে সামান্য কিছু দেন। তাতেই কোনওরকমে চলছে।’’

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy