Advertisement
E-Paper

শুকনো মুড়িতে ভরছে পেট  

লকডাউন কথাটির মানে বোঝেন না তাঁদের কেউই। কেন এই লকডাউন, জানা নেই তাও। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছুঁতে পারেনি তাঁদের।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২০
শূন্য স্টেশনে বসে গীতারানি, পুটুরিয়া। সাগরদিঘিতে। নিজস্ব চিত্র

শূন্য স্টেশনে বসে গীতারানি, পুটুরিয়া। সাগরদিঘিতে। নিজস্ব চিত্র

এক জনের আয় সারা দিনে ১৩ টাকা, আর এক জনের মেরেকেটে ১১। লকডাউনের বাজারে তাই দিয়ে এক জনের কেটেছে মুড়ি খেয়ে। অন্য জনের জুটেছে সামান্য চিড়ে আর গুড়।

লকডাউনের থাবায় থমকে যাওয়া ট্রেনের গতি দু’জনের জীবনেও টেনে এনেছে বাঁচা মরার এক গভীর সঙ্কট।

লকডাউন কথাটির মানে বোঝেন না তাঁদের কেউই। কেন এই লকডাউন, জানা নেই তাও। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছুঁতে পারেনি তাঁদের। জনশূন্য রেল স্টেশনে যাতায়াত আটকাতে পারেনি কেউই।

সারাদিন সাগরদিঘি স্টেশন পাড়ে বসে থেকেও মঙ্গলবার এই যৎ সামান্য আয় নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা তাঁদের চোখে মুখে। বিকেলে স্টেশন পাড় থেকে বাড়ি ফিরে এক প্রতিবেশীর কাছে পেয়েছিলেন দুটো ভাত, আর একজন মুড়ির সঙ্গে গুড় মিশিয়ে খেয়ে কাটিয়েছেন রাত।

এঁদের একজন বছর ৬৫ বয়সের গীতা ফুলমালি, অন্য জন বছর ৬০ পেরোনো পুটুরিয়া কিস্কু। সাগরদিঘি স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের পাশে এঁদের দু’জনকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখেছেন অনেকেই। বেশ কয়েক জোড়া ট্রেনের যাতায়াতের পথে পথচলতি মানুষের দানে কোনওদিন ৯০ টাকা, কোনওদিন ৮০ টাকা করে জুটত ভিক্ষার পাত্রে। বিকেলে ওই আয় থেকে চাল, আলু কিনে নিয়ে ফিরতেন বাড়িতে। উনুনে তা ফুটিয়ে নিতেন নিজেরাই। এ ভাবেই চলছিল তাদের দু’জনের নিঃসঙ্গ জীবনের সংসার। কিন্তু সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে লকডাউন।

ট্রেন বন্ধ, বাজার হাট সুনসান। অফিস, পঞ্চায়েত বন্ধ। ভিক্ষে দেওয়ার লোক তাই নেই বললেই চলে পথেঘাটে। রাষ্ট্রের লকডাউনে তাই ওরা এখন নিরন্ন। কখনও কিছু জুটছে, কখনও তা-ও না।

গীতার বাড়ি দেড় কিলোমিটার দূরে ফুলবন গ্রামে। স্বামী মারা গিয়েছেন সেই কবে। একমাত্র ছেলে স্ত্রী, পুত্রকে নিয়ে থাকেন সাগরদিঘিতে। তাই নিঃসঙ্গ গীতাদেবীর ভরসা এই ভিক্ষাবৃত্তিই। পুটুরিয়ার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। দু’জনেই বিয়ে করে সংসার পেতেছেন চন্দনবাটী গ্রামেই। কিন্তু বাবার স্থান হয়নি তাঁদের কারও ঘরেই। তাই পেট চালাতে স্টেশনকে বেছে নিয়েছেন কয়েক বছর থেকেই।

গীতা বলছেন, “নিজের পেট চালাতে সাগরদিঘি স্টেশনেই এসে বসেছিলাম একদিন বাটি হাতে। সেই শুরু। ঝড় বৃষ্টিতেও ভিক্ষায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু দু’সপ্তাহ থেকে ট্রেন বন্ধ। সোমবার জোটেনি ১০ টাকাও।’’

পুটুরিয়া বলছেন, “ছেলে থাকতেও নেই। তাই ভিক্ষে ছাড়া উপায় কি? খাটতে পারি না। সরকারি ভাতাও পাই না। কবে ট্রেন চলবে, রয়েছি সেই অপেক্ষাতেই।”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy