Advertisement
১৯ মে ২০২৪

যুগল বেপাত্তা, খুনে অভিযুক্ত তরুণীর বাবা

বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গাটায় এখনও রক্তের দাগ শুকোয়নি। সোমবারেও গ্রামের লোকজন তো বটেই, আশপাশের গাঁ উজিয়েও লোকজন ভিড় করেছেন চর রাজাপুরের পশ্চিম কলোনিতে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিনগর  শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫২
Share: Save:

বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গাটায় এখনও রক্তের দাগ শুকোয়নি। সোমবারেও গ্রামের লোকজন তো বটেই, আশপাশের গাঁ উজিয়েও লোকজন ভিড় করেছেন চর রাজাপুরের পশ্চিম কলোনিতে।

কেউ বলেছেন, ‘‘ওই দ্যাখ, ওইখানেই ছেলেটাকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়েছে।’’ কারও মন্তব্য, ‘‘বোনকে বাঁচাতে এসে ছেলেটাই বেঘোরে মরে গেল গো।’’

কারও টিপ্পনি, ‘‘মেয়ের সম্পর্ক মানতে পারল না। এখন পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।’’

রানিনগরের সীমান্ত ঘেঁষা চর রাজাপুরে এখন আলোচনার বিষয় একটাই। সম্পর্কের টানাপড়েনে দুই পরিবারের অশান্তিতে মরতে হল তরতাজা যুবককে। ঠিক কী ঘটেছিল?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম কলোনিতেই বাড়ি সুদীপ্ত মণ্ডল ও সোমা মণ্ডলের। দু’জনের সম্পর্কও দীর্ঘ দিনের। বছর বাইশের সুদীপ্তর বাড়িতে কোনও সমস্যা না থাকলেও এই সম্পর্ক মেনে নেননি সোমার বাবা স্বপন মণ্ডল। মেয়েকে সে কথা বহু বার বুঝিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এ দিকে শনিবারেই বাড়ি থেকে বেপাত্তা হয়ে যান বছর উনিশের সোমা। খোঁজ মেলে না সুদীপ্তরও। দুইয়ে দুইয়ে চার করতে দেরি হয়নি স্বপনের।

অভিযোগ, রবিবার দুপুরে স্বপন সুদীপ্তর বাড়িতে যায়। সেখান থেকে সুদীপ্তর মা রানিদেবীকে মারধর করতে করতে নিয়ে আসে নিজের বাড়ির সামনে‌। সেখানেও প্রকাশ্যে ওই মহিলাকে মারধর করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে সেই খবর পৌঁছে যায় চর রাজানগরে, রানিদেবীর বাবার বাড়িতে। সেখান থেকে দিদিকে বাঁচাতে ছুটে আসেন তাঁর তিন ভাই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, রানিদেবীর ভাইয়েরা এসে প্রতিবাদ করেন। তাঁরা প্রস্তাব দেয়, এমন অশান্তি না করে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার। অভিযোগ, সে কথায় কান না দিয়ে স্বপন ও তার জনাকয়েক সঙ্গী রানিদেবী-সহ তাঁর তিন ভাইকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে স্বপন। চার জনেই গুরুতর জখম হন।

গোধনপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় জয়ন্ত সরকারের (৩৮)। বাকি তিন জন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে রানিদেবী বলছেন, ‘‘আমাকে বাঁচাতে এসে ভাইটাই মরে গেল। ওদের সেই রণমূর্তি দেখে কেউ বাঁচাতে আসারও সাহস পায়নি। আমার ভাইকে যারা মেরে ফেলল তাদের যেন চরম শাস্তি হয়।’’ ঘটনার পরেই রানিনগর থানায় নিহতের পরিবার থেকে স্বপন-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়। রবিবার রাতেই স্বপনের দুই ভাই সঞ্জয় মণ্ডল ও কালু মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে মূল অভিযুক্ত স্বপনকে এখনও পুলিশ ধরতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে, স্বপনের বিরুদ্ধে চোরাপাচারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। জেলেও ছিল বেশ কিছু দিন। সুদীপ্ত ও সোমার মোবাইলে একাধিক বার ফোন করেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘নতুন করে যাতে আর অশান্তি না হয় সে জন্য বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। পলাতক অভিযুক্তদেরও খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Raninagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE