Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Dacoity in Ranaghat

রানাঘাট ডাকাতিকাণ্ডে আট দিনে ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ, তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ধৃতদের আইনজীবী

গত অগস্টে ডাকাতদলকে ধরাশায়ী করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ‘পুলিশ দিবস’-এ সংবর্ধিত হন রানাঘাট থানার এএসআই রতন রায়। ওই ডাকাতির ঘটনায় ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হল মাত্র আট দিনে।

রানাঘাটে ওই বিপণীতে ডাকাতির পর ডাকাতদলের পিছু ধাওয়া করে পুলিশ।

রানাঘাটে ওই বিপণীতে ডাকাতির পর ডাকাতদলের পিছু ধাওয়া করে পুলিশ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:০৫
Share: Save:

শহরে ভরদুপুরে নামী সংস্থার স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতির ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল নদিয়ার রানাঘাটে। ওই একই দিনে প্রায় একই সময়ে একই সংস্থার আর এক বিপণিতে ডাকাতি হয়। সেটা পুরুলিয়ায়। রানাঘাটে ডাকাতদলের পিছু নিয়ে তাদের দু’জনকে ধরে পুলিশ। সেই দৃশ্য সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। গত অগস্টে ডাকাতদলকে ধরাশায়ী করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ‘পুলিশ দিবস’-এ সংবর্ধিত হন রানাঘাট থানার এএসআই রতন রায়। ওই ডাকাতির ঘটনায় ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হল মাত্র আট দিনে। সোমবার রানাঘাট ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক মনোদীপ দাশগুপ্তের এজলাসে শেষ হয় ওই প্রক্রিয়া। শেষ দিন সাক্ষী হিসাবে প্রস্তুত ছিলেন তদন্তকারী আধিকারিক। অন্য দিকে, তদন্তে একাধিক অসঙ্গতির অভিযোগ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে পুলিশের তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেছেন সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়।

আদালত সূত্রে খবর, রানাঘাট ডাকাতি কাণ্ডে ৩৪ জন সাক্ষীর রেকর্ড করা বয়ানে ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তদন্তকারী আধিকারিক সুব্রত ঘোষকে। ধৃতদের অন্যতম আইনজীবী বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় একাধিক অসঙ্গতির অভিযোগ আনেন। তিনি সওয়ালে বলেন, ‘‘পুলিশি তদন্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। যে সমস্ত জিনিস বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তার ওপরে পর্যাপ্ত ‘লেভেলিং’ করেননি তদন্তকারী আধিকারিক।’’ তিনি জানান, পুলিশের তরফে দাবি করা হয়, ডাকাতি হয়েছে ‘সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসে’। কিন্তু, সরকারি রেকর্ড বলছে, দোকানটির প্রকৃত নাম ‘সোনাঝুরি’। দ্বিতীয় নামেই বিপণির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে পুরসভায়। তা হলে ‘সোনাঝুরি’ নাম কেন পুলিশের খাতায় উল্লেখ নেই, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ঘটনার দিন রানাঘাট থানার আইসি টেলিফোন মারফত এই খবরটি পেয়েছিলেন। যে টেলিফোন নম্বর থেকে ফোনটি এসেছিল সেই ফোনের কলরেকর্ড কেন খতিয়ে দেখেননি তদন্তকারীরা, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ ছাড়াও যে ফোন থেকে সে দিনের পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদলের গুলির ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছিল, সেই ফোনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের মধ্যে মধ্যে ছিলেন স্বর্ণ বিপণির দুই ম্যানেজার। ছিলেন চিকিৎসক এবং তদন্তকারী আধিকারিক। যিনি ডাকাত ধরার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন, ছিলেন সেই প্রত্যক্ষদর্শীও। সমস্ত ডিজিটাল তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা দাবি করে সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, পুলিশি তদন্ত ঠিকঠাকই হয়েছে। আদালতে তিনি জানান, সব মিলিয়ে আট দিনের মাথায় এই গোটা ডাকাতি কাণ্ডের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হল রানাঘাট থার্ড কোর্টের জুডিশিয়ারি ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে। পরে আদালতের বাইরে একে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেন সরকারি আইনজীবী।

শুনানি শেষে অভিযুক্তপক্ষের অন্যতম আইনজীবী বাসুদেব আবারও দাবি করেন যে, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় তদন্ত চালানো হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশি তদন্তের অসঙ্গতি থাকলে তার দায় কখনও অভিযুক্তের উপরে বর্তায় না।’’ পাল্টা সরকারপক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আসামিদের বিপক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পুলিশ আদালতে পেশ করেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং অন্যান্য সাক্ষীরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন। আশা করছি দৃষ্টান্তমূলক রায় হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dacoity in Ranaghat Court Crime police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE