চিড়িয়াখানার পথে। —নিজস্ব চিত্র
বাড়ি বদলে যায়।
নদীর খোলে জলজ ঘ্রাণ আর নিশ্চুপ চরে রোদ পোহানো— পড়ে রইল সব।
মঙ্গলবার থেকে থেকে, তার একান্ত দিনযাপনে দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে বেমালুম। নদীর কুমির সটান গিয়ে পড়েছে এক হাঁটু জলের বাঁধানো চৌবাচ্চায়।
মেছোদের জাল, বেথুয়াডহরির এক ফালি চৌবাচ্চা আর রমনা বাগানের সরু ফিতের মতো মিনি জু-এর জলা ছাড়িয়ে, গত এক মাসে, একের পর এক ঠিকানা বদলে এ বার সে কলকাতার চিড়িয়াখানার নব্য আবাসিক। দুপুরভর যেখানে তাকে বিঁধে থাকবে ঝাঁক বাঁধা চোখ, পিঠে পড়বে দেহাতি সংস্কারের খুচরো পয়সা।
নদী থেকে চৌবাচ্চা— এই যাত্রার গল্পটা এ বার বলা যাক।
দিন কয়েক ধরেই, মাঝারি মাছের খোঁজে যাঁরা শীতের জলঙ্গিতে ভেসে বেড়ান, সেই জেলেরা বলাবলি করছিলেন— ‘কী যেন ভাসছে জলে!’ নদিয়ার মৎস্যজীবীরা কুমির দেখেননি। এলোমেলো কিছু ইতিহাস আর গালগল্প থাকলেও নদীয়া আর পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের বুক ফুঁড়ে যাওয়া জলঙ্গিতে কুমিরের দাপাদাপি তেমন চোখে পড়ে না আর। পদ্মা-ভাগীরথী কিংবা নদী লাগোয়া আর পাঁচটা খাঁড়িতেও গত কয়েক দশকে তাদের উপস্থিতি তেমন টের পাওয়া যায়নি। পদ্মার শাখা, জলঙ্গির উজান বেয়ে এত উপরে এমন মিঠে জলের কুমির তা হলে এল কোথা থেকে?
উদ্ধারের দিন।— ফাইল চিত্র
গাল ভার করে কপালে ভাঁজ ফেলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন— পদ্মা বেযে জলঙ্গিতে সেঁধিয়ে গিয়েছিল বোধহয়। কেউ বা তার ‘রুট’ খুঁজতে বলছেন, ‘‘এ বোধহয় পটনার দিক থেকে এসে গঙ্গায় পড়েছিল। সেখান থেকেই জলঙ্গিতে ভেসে গিয়েছে।
তা বলে, কুমির নিয়ে গাল গপ্পের শেষ নেই। ডোমকলের গাঁ-গঞ্জে ষাটের দশকের সেই গল্পটা এখনও উঁকি মারে। ভৈরবের পাড়ে ভগীরথপুরের জমিদা তাঁর গাদা বন্দুকে পেল্লাই সেই কুমির মেরে গরুর গাড়িতে চাপিয়ে ঘরে ফিরছেন— লুৎফর রহমান এখনও ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পান।
পদ্মায় ইলিশের খোঁজে গিয়ে কুমিরের সহ্গে সেই মোলাকাত মনে রেখেছেন মোহন মণ্ডলও। নির্মলচর এলাকায় এখনও এক আব্দুল মাঝির গল্পকথা শোনা যায়— একটা কুমির রোজ তাকে জ্বালাতন করত। এক দিন সে বিরক্ত হয়ে পাঁজা কোলা করে ধরে কুমিরের গলায় পরিয়ে দিল কুশ ঘাসের মোটা দড়ি। সেই দড়ির প্রান্ত নৌকায় বেঁধে তিন দিন ঘুরিয়ে ছিল সে। তার পর?
তার আর পর তেমন নেই। তবে, জলঙ্গির কুমির চিড়িয়াখানা যাত্রা করলেও, তেহট্টের জিৎপুর আর গোপালনগরের মানুষ এখনও সাবধানে নামছেন শীতের নদীতে, বলছেন, ‘‘সাবধানের মার নেই বাবা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy